বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের কাজ কী
এনার্জি খাতে প্রতিযোগিতামূলক বাজার সৃষ্টি, ব্যবস্থাপনা, পরিচালনা, ট্যারিফ নির্ণয়ে স্বচ্ছতা আনয়ন, বেসরকারি বিনিয়োগে অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টি এবং ভোক্তার স্বার্থ সংরক্ষণের মূল লক্ষ্য নিয়ে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি) ২০০৩ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন আইন ২০০৩-এর ০৬ ধারার বিধানমতে একজন চেয়ারম্যান (সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের বিচারপতি পদমর্যাদায়) এবং চারজন সদস্যের (হাইকোর্টের বিচারপতি পদমর্যাদায়) সমন্বয়ে এই কমিশন গঠন করা হয়েছে।
কমিশন একটি নিরপেক্ষ এবং Quasi-Judicial সংবিধিবদ্ধ সংস্থা হিসেবে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের স্বার্থসংশ্লিষ্ট সব পক্ষের ন্যায্য অধিকার, সুশাসন ও ন্যায়পরায়ণতা প্রতিষ্ঠায় অঙ্গীকারবদ্ধ। সূচনালগ্ন থেকেই নিয়মিত উন্মুক্ত সভা ও গণশুনানির মাধ্যমে যৌক্তিক ট্যারিফ নির্ধারণ, গ্রাহক হয়রানি রোধ, প্রিপেইড ও ইভিসি মিটার স্থাপন, মোবাইল বিলিং পদ্ধতি, অনলাইন গ্রাহকসেবা, বার্ষিক বিল পরিশোধ প্রত্যয়ন চালুসহ অসাধু এবং একচেটিয়া ব্যবসা সম্পর্কিত বিরোধের উপর্যুক্ত প্রতিকার নিশ্চিত করতে কমিশন স্বীয় ভূমিকা অব্যাহত রেখেছে।
কমিশনের কাছে নিষ্পত্তির জন্য যেসব বিরোধ আসে তার বেশির ভাগই অবৈধ সংযোগ, অতিরিক্ত বিদ্যুৎ বিল, মিটার টেম্পারিং, ন্যূনতম বিল আরোপ, বিল বকেয়ার কারণে সংযোগ বিচ্ছিন্ন, ইভিসি মিটারে বিল না করা ইত্যাদি সংক্রান্ত। ২০২২-২৩ অর্থবছরে কমিশন ১০২টি বিরোধ নিষ্পত্তিপূর্বক রোয়েদাদ প্রদান করে। এর মধ্যে বিদ্যুৎ সংক্রান্ত বিরোধ ৩৮টি, গ্যাস (শিল্প ও বাণিজ্য) সংক্রান্ত বিরোধ ৫১টি এবং গ্যাস (সিএনজি) সংক্রান্ত বিরোধ ১৩টি। বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন আইন, ২০০০ এর ধারা ৫৪ অনুযায়ী কমিশন ভোক্তাদের অভিযোগ গ্রহণ ও নিষ্পত্তি করে থাকে। বর্তমান কমিশন দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকেই বিরোধ নিষ্পত্তি আবেদন ৮৩টির বিপরীতে আগের বকেয়াসহ ৯৩টি আবেদন (শিল্প গ্যাস ৪৬টি, বিদ্যুৎ ২৮টি ও সিএনজি ১৯টি) নিষ্পত্তি করেছে যার অর্থনৈতিক মূল্য প্রায় ৭০৪ কোটি ৩৯ লাখ টাকা সমমানের।
উল্লেখ্য, গত মার্চ থেকে বর্তমান কমিশন কার্যক্রম শুরু করে। এ পর্যন্ত কমিশন ৯৫টি বিরোধ নিষ্পত্তিপূর্বক রোয়েদাদ প্রদান করেছে। ২০১৫-১৬ সাল থেকে যেসব পুরনো মামলা ছিল সেগুলো দ্রুত নিষ্পত্তি করে কমিশন বিরোধীয় পক্ষগুলোর মধ্যে আস্থা অর্জনের মাধ্যমে এনার্জি খাতে সুশাসন প্রতিষ্ঠায় এক অনন্য নজির স্থাপনে সচেষ্ট হয়। এতে করে কমিশন গ্যাস খাতে প্রায় ১৯৭ কোটি টাকার এবং বিদ্যুৎ খাতে ৫১৫ কোটি টাকার বিরোধ নিষ্পত্তি করতে সক্ষম হয়েছে। উভয় পক্ষের বক্তব্য শুনে কমিশন বিরোধ নিষ্পত্তি করে থাকে।
এছাড়া কমিশন ভোক্তাদের স্বার্থ সংরক্ষণে ভোক্তা কর্তৃক কমিশনে দাখিলকৃত অভিযোগ নিষ্পত্তি করে থাকে। সাধারণত বিদ্যুৎ ও গ্যাস সংযোগ প্রাপ্তিতে অসুবিধা, বিদ্যুৎ ও গ্যাসের অতিরিক্ত বিল ও জরিমানা দাবি, সংযোগ বিচ্ছিন্ন করাসহ বিভিন্ন অভিযোগ এবং এনার্জি সেবা প্রদানকারী সংস্থা কর্তৃক সেবা যথাযথভাবে প্রদান না করা হলে তার প্রতিকারের জন্য ভোক্তা কমিশনে অভিযোগ দাখিল করতে পারেন। ২০২২-২৩ অর্থবছরে ২৫টিসহ এ পর্যন্ত মোট ২১০টি অভিযোগের বিষয়ে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।