যুদ্ধের অস্ত্র হিসেবে খাদ্য বন্ধ করেছে ইসরায়েল
পঞ্চাশ বছর আগে ১৯৭৩ সালে তৃতীয় আরব-ইসরায়েল যুদ্ধের পর আরব দেশগুলোর সঙ্গে আর কোনো যুদ্ধ না হলেও ফিলিস্তিন-ইসরায়েল দ্বন্দ্ব-সংঘাত বন্ধ হয়নি। যদিও সংঘাত বন্ধে শান্তির ফরমুলা হিসেবে বিভিন্ন সময় দুই রাষ্ট্র সমাধানের কথা বলেছে, কিন্তু সেটা আর বাস্তবে রূপ নেয়নি। ফিলিস্তিন এবং ইসরায়েল দুটি আলাদা স্বাধীন রাষ্ট্রের সমাধান প্রথম এসেছিল ১৯৪৭ সালের নভেম্বরে জাতিসংঘের মাধ্যমে। সে সময় বলা হয়, ইসরায়েল হবে ইহুদিদের জন্য এবং ফিলিস্তিন আরবদের জন্য। তবে ইহুদিরা মোট ভূখণ্ডের ১০ শতাংশের মালিক হলেও তাদের দেওয়া হয় মোট জমির অর্ধেক। যেটা আরবরা মানেনি। এরই ধারাবাহিকতাতেই হয় প্রথম আরব-ইসরায়েল যুদ্ধ। কিন্তু একটা সময় এসে ঠিকই ইসরায়েল এবং ফিলিস্তিন উভয়পক্ষই দুই রাষ্ট্র সমাধানে ঐকমত্য হয়। কিন্তু সেটা কীভাবে হলো? এবং পরে কেন আবার ব্যর্থও হলো সেটা একটা বড় প্রশ্ন। ফিলিস্তিন এবং ইসরায়েল পৃথক দুটি রাষ্ট্রের ধারণা প্রথমবারের মতো বাস্তবতার দিকে এগোতে শুরু করে ১৯৯৩ সালে নরওয়ের অসলোতে ফিলিস্তিন-ইসরায়েলের শান্তিচুক্তির মাধ্যমে। যেটা ‘অসলো অ্যাকর্ড’ নামে পরিচিতি।
অসলোতে দুই রাষ্ট্র সমাধান মেনে নেওয়া হলেও সেই রাষ্ট্র কবে গঠন হবে তার কোনো সময়সীমা বেঁধে দেওয়া হয়নি। এমনকি ইসরায়েলের বাইরে আলাদা একটি ফিলিস্তিন রাষ্ট্র গঠনের জন্য গুরুত্বপূর্ণ চারটি বিষয়েরও কোনো সমাধান করা হয়নি। এখানে মূল বিষয়গুলো হচ্ছে দুই রাষ্ট্রের সীমান্ত কোথায়, কীভাবে নির্ধারণ হবে সেটা। জেরুজালেম কার অধীনে থাকবে। ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডের ভেতরে থাকা ইসরায়েলি বসতি স্থাপনকারীদের কীভাবে সরিয়ে নেওয়া হবে। এবং ইসরায়েল রাষ্ট্র গঠনের পর থেকে ইসরায়েলের ভেতরে থাকা যেসব ফিলিস্তিনি বাস্তচ্যুত হয়েছেন, তারা ইসরায়েলে কীভাবে ফিরবেন। চুক্তিতে বলা হয়েছিল, পাঁচ বছরের মধ্যে একটি ফিলিস্তিনি কর্র্তৃপক্ষ গঠনের পর এগুলো আলোচনার ভিত্তিতে পরে ঠিক করা হবে। কিন্তু সেটা আর কখনোই হয়নি। ১৯৯৬ সালে ইসরায়েলে ডানপন্থিরা ক্ষমতায় আসার পর ইসরায়েলের সরকারও আর শান্তি প্রক্রিয়াকে এগিয়ে নিতে চায়নি। পরবর্তী বছরগুলোতে বিভিন্ন সময় দুই পক্ষের বৈঠক হলেও সমাধান আসেনি।
এ সময় ইসরায়েল মূলত নজর দিয়েছে ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডে ইহুদি বসতি সম্প্রসারণের ওপর এবং জেরুজালেমকে তারা ইসরায়েলের রাজধানীও ঘোষণা করেছে। আমেরিকা সেটাকে স্বীকৃতিও দিয়েছে। সব মিলিয়ে এখন যে বাস্তবতা তৈরি হয়েছে, তাতে করে স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র বাস্তবে প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব কি-না তা নিয়ে অনেকের মধ্যেই সন্দেহ রয়েছে।