সংলাপ খুব সহজ বিষয় নয়
বাংলাদেশ ও বিশ্বের বিভিন্ন মহলে এই মুহূর্তে সবচেয়ে আলোচিত বিষয় হলো দেশের আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন এবং এ নিয়ে রাজনৈতিক সমঝোতা। দীর্ঘদিন যাবৎ এ দুটি বিষয় নিয়ে পক্ষে-বিপক্ষে নানা আলোচনা-সমালোচনা ও বিতর্ক লক্ষ করা গেছে। তবে এক্ষেত্রে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ বিভিন্ন দেশের হস্তক্ষেপ নতুন আবহ তৈরি করতে যাচ্ছে বলে মনে করা হচ্ছে। দেশে দীর্ঘদিন ধরে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে যে দূরত্ব ও আস্থার সংকট তৈরি হয়েছে, তা নিরসনে দলগুলোর ভেতর থেকে কোনো উদ্যোগ লক্ষ করা যায়নি। ফলে সংকটের জায়গাটি বিস্তৃত হয়েছে। এই সংকট জিইয়ে রেখে আগামী জাতীয় নির্বাচন কতটা গ্রহণযোগ্য করা যাবে তা নিয়ে প্রশ্ন রয়ে গেছে। এই পরিস্থিতিতে সংকটের সমাধান কোন পথে এমন জিজ্ঞাসা জাতীয় ও আন্তর্জাতিক মহলে ঘুরেফিরে আসছে। সেই জিজ্ঞাসার সূত্র ধরে সরকার ও বিরোধী পক্ষের মধ্যে আলোচনা বা সংলাপের বিষয়টি সামনে এসেছে।
কিন্তু পরস্পর বিরোধী দুটি পক্ষের মধ্যে সংলাপ খুব সহজ বিষয় নয়। যখন এক পক্ষের চেয়ে অন্যপক্ষের দায় বেশি হয়ে যায়, তখন সংলাপ বা আলোচনার পথ রুদ্ধ হওয়া স্বাভাবিক। সে দায় মোচনের জন্য দুঃখপ্রকাশ বা ক্ষমা চাওয়ার সংস্কৃতি বাংলাদেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে দেখা যায় না। অথচ রাজনৈতিক বাস্তবতায় বেফাঁস কথা বলার অপসংস্কৃতি বা অন্যকে ঘায়েল করার ঘৃণ্য প্রস্তুতি থেকে বেরিয়ে আসতে পারলে অনেক সমস্যারই সহজ সমাধান হয়ে যেত। কিন্তু তা না করে সবসময় প্রতিপক্ষকে অসম্মান করার প্রবণতা রাজনীতিকে ক্ষতিগ্রস্ত করছে। সেটি আমাদের রাজনীতিবিদরা হয়তো বোঝেন, কিন্তু স্বীকার করবেন না বা মেনে নেবেন না। জনগণের একটি অংশও এখন বোঝেন যে, রাজনীতিবিদদের এ ধরনের আচরণ সিদ্ধ নয়, তবে যেহেতু জনগণ রাজনীতিবিদদের কাছে জিম্মি সেহেতু তারা তাদের মতপ্রকাশ করতে ভয় পান। দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে সংলাপের কোনো প্রয়োজনীয়তাই হতো না, যদি সব পক্ষ সংযত থেকে কর্মকা- পরিচালনা করত। বিশেষ করে রাজনৈতিক দলগুলোর পাল্টাপাল্টি বক্তব্য-বিবৃতি নানা ধরনের বিব্রতকর পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে। এক্ষেত্রে নিজেদের অপরাধ বা ভুল স্বীকার করে নেওয়ার ঔদার্য দলগুলো দেখাতে পারলে রাজনৈতিক পরিস্থিতি আজ এ পর্যায়ে যেত না।