নির্বাচন ও রাজনৈতিক বাস্তবতা
দলনিরপেক্ষ নির্বাচনকালীন সরকারের দাবি ক্ষমতাসীনরা কোনোভাবেই মানবে না। অতীতে বিএনপি সরকারও এটা মানতে চায়নি। না মেনে একতরফা নির্বাচনও করে ফেলেছিল। অবশ্য বলা হয়ে থাকে, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিকে সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত করতেই ওই নির্বাচন সেরে জাতীয় সংসদ গঠনের প্রয়োজন ছিল। কিন্তু মনে হয় না, ব্যাপারটা এত সরলরৈখিক। বিতর্কিত ওই নির্বাচন করে ক্ষমতায় বসে যেতে পারলে তারা হয়তো তখন অন্য সুরে কথা বলত। জামায়াতে ইসলামীসহ অন্যান্য দলকে পাশে নিয়ে আওয়ামী লীগ তখন একটা কার্যকর আন্দোলন গড়ে তুলতে পেরেছিল। জনপ্রশাসনের ভেতর থেকে গড়ে উঠেছিল ‘জনতার মঞ্চ’। একটি রাজনৈতিক সরকারের বিরুদ্ধে প্রশাসনের ভেতর থেকে এমন বিদ্রোহমূলক ঘটনা ঘটাতে পেরেছিল আওয়ামী লীগ। এসব উপেক্ষা করে শাসন চালিয়ে যাওয়া তো অসম্ভব ছিল বিএনপির জন্য। তবে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে অনুষ্ঠিত পরবর্তী নির্বাচনে বিএনপি ১১৬ আসন পায়। আন্দোলনে ক্ষমতাচ্যুত হয়ে নির্বাচনে অংশগ্রহণের পরও সর্ববৃহৎ বিরোধী দল হিসেবে তারা এসে বসে সংসদে।
এখন প্রশ্ন উঠতে পারে, কোনো কারণে দলনিরপেক্ষ সরকারের দাবি মেনে নিতে বাধ্য হয়ে নির্বাচনে গেলে বর্তমানে ক্ষমতাসীনরা কি বিএনপির মতো শতাধিক আসন পাবে? সে ভরসা কি আছে? আওয়ামী লীগ সরকার নজিরবিহীনভাবে পরপর তিন মেয়াদে রাষ্ট্রক্ষমতায় রয়েছে। মাত্র এক মেয়াদ ক্ষমতায় থেকে নির্বাচন মোকাবিলা করতেও কতই না ভীত হয়ে পড়ে একেকটি সরকার! অভিজ্ঞতায়ও দেখা গেছে, দলীয় সরকারের অধীনে ছাড়া কোনো নির্বাচনে সদ্যবিদায়ী ক্ষমতাসীন দল আর সরকার গড়তে পারেনি। অন্যদিকে দলীয় সরকারের অধীনে অনুষ্ঠিত প্রতিটি নির্বাচনে ক্ষমতাসীন দলই পুনরায় সরকার গঠন করেছে। এসব পরিষ্কার জানা আছে বলেই বিরোধীদের দাবির কথা শুনতেও রাজি নয় ক্ষমতাসীনরা। তারা যেহেতু নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিধান বাতিল করে এবং এরই মধ্যে দু-দুটি নির্বাচন পছন্দমতো সেরে ফেলে দেশটা চালিয়ে যেতে পেরেছে, সুতরাং তারা চাইছে সেভাবেই আরও একটি নির্বাচন করে ফেলতে।