কখন জ্বলবে লাল সবুজ হলুদ সিগন্যাল
আমরা বহু বছর ধরে যে শহরে বসবাস করি সেই শহরটি একটা গৌরবের শহর এবং সেই সঙ্গে বেদনারও। এই শহরে দেশের মহামান্য রাষ্ট্রপতি থাকেন, থাকেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, মন্ত্রিপরিষদ, সচিব, সেনাপ্রধান, সংসদ সদস্যরা এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী কর্তৃপক্ষের প্রধানরা। ১৬১০ সালে এই শহর যখন সুবে বাংলার রাজধানী ছিল তখনো অমাত্যবর্গ এই শহরে বসবাস করতেন। তারপর রাজধানী যখন মুর্শিদাবাদে চলে যায় শহরটি পরিত্যক্ত হলেও একটি বড় শহরের মর্যাদা ও অমর্যাদা নিয়েই বেঁচেছিল। তখনকার অমাত্যবর্গ নিশ্চয়ই হেঁটে এই শহরে চলাচল করতেন না, তখনকার যোগাযোগব্যবস্থা কেমন ছিল তারও একটা চিত্র পাওয়া যায়। কালক্রমে এত শত বছর পেরিয়ে ঢাকা এখন কল্লোলিনী মহানগরে পরিণত হয়েছে। বহু রাস্তাঘাট, বাজার, বহুতল ভবন, শপিংমল তৈরি হয়েছে। জনসংখ্যার প্রবল চাপ এই ঢাকা শহরের ওপর। অর্থের, বাণিজ্যের বিপুল সমাগম হয়েছে, যা অকল্পনীয়।
মাত্র পঞ্চাশ বছর আগের এই শহরকে কেউ চিনতেই পারবে না। শহরের যা কিছু সৌন্দর্য ছিল সেগুলো ধ্বংস হয়ে গিয়ে শত শত ম্যাচবাক্সের মতো দালান গড়ে উঠেছে। এ যেন সারিবদ্ধ কতগুলো কংক্রিটের স্তূপ। শহর সম্প্রসারিত হয়েছে। সরকার বিত্তবান এবং তথাকথিত অভিজাতদের নামমাত্র মূল্যে আবাসনের ব্যবস্থা করেছে। শহরের জায়গার দাম প্রায় সোনার দামের মতো। জনস্বাস্থ্যের জন্য সরকারি ব্যবস্থা অপ্রতুল। পাশাপাশি স্বাস্থ্য ও শিক্ষা বাণিজ্যের বিপুল প্রসার ঘটেছে। প্রচুর বেসরকারি ক্লিনিক, হাসপাতাল, বিশ্ববিদ্যালয়ে ছেয়ে গেছে আমাদের প্রিয় নগরী ঢাকা। কিছু কিছু এলাকায় সবুজ একেবারেই দেখা যায় না।
এ শহরে একটি বিষয় শুধু আজ থেকে পাঁচশত বছর আগে যে জায়গায় রয়ে গেছে তা হলো যানবাহন নিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থা। ইসলাম খাঁর সময়ে ট্রাফিক পুলিশ ছিল কিনা তা আমার জানা নেই। ইতিহাসবিদ বা গবেষকরা বলতে পারবেন। কিন্তু বর্তমানে লাখ লাখ যানবাহন চলার পরেও কোনো আধুনিক নিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থা নেই। একদা আধুনিক ব্যবস্থা চালু হয়েছিল, যেটা আমরা দেখতে পাই হাঁ করে দাঁড়িয়ে আছে কতগুলো সিগন্যাল বাতি। বাতিগুলো কখনোই জ্বলছে না, কাজেই নেভার প্রশ্নই ওঠে না। মধ্যযুগীয় কায়দায় একজন নীল জামা পরা লোক শুধু হাত উঠাচ্ছে আর নামাচ্ছে। এই লোকটি একজন ট্রাফিক পুলিশের কনস্টেবল, তার জ্ঞান শুধু সীমিত নয়, সে নানা সংকটে ভোগে। তার মাথাব্যথা ধরে, পারিবারিক কলহ আছে, টানাপড়েন আছে এবং এর মধ্যেই টুপাইস আয়ের ধান্ধাও আছে। সে কখনো কখনো কোনো রাস্তায় গাড়ি চলাচলের দিকনির্দেশনা দিতে ভুলে যায়। ফলে হাজার হাজার যানবাহন আটকে থাকে। আবার দেখা যায়, কোনো রাস্তায় যানবাহনই নেই সেই রাস্তায় সে চলাচলের নির্দেশ দিয়ে বসে আছে। কী অসাধারণ তার নৈপুণ্য!
- ট্যাগ:
- মতামত
- ট্রাফিক সিগনাল