কূটনৈতিক সক্ষমতা নাকি দলীয় রাজনীতি
জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে বাংলাদেশে বিদেশি বন্ধু ও উন্নয়ন সহযোগীদের দৌড়ঝাঁপ নতুন নয়। তবে এবারের বিষয়টি নজিরবিহীন বলা যায়। কারণ বিশে^র বিবদমান পরাশক্তিগুলো এবার পক্ষে-বিপক্ষে অবস্থান জানানই কেবল দেয়নি তারা নিষেধাজ্ঞা থেকে শুরু করে ভিসানীতিও ঘোষণা করেছে। এই দুই মার্কিন পদক্ষেপের মধ্য দিয়ে পশ্চিমা বিশ্ব তাদের অবস্থান স্পষ্ট করেছে। অন্যদিকে চীন, রাশিয়া ক্ষমতাসীনদের সঙ্গে নানান উন্নয়ন প্রকল্প চালু রাখার পাশাপাশি পশ্চিমা শিবিরের অবস্থানের পাল্টা অবস্থানের কথা বিবৃতির মাধ্যমে প্রকাশ করেছে। চলমান এই বাস্তবতায় সম্প্রতি নয়াদিল্লিতে অনুষ্ঠিত জি-২০ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অংশগ্রহণ ও তার আগে-পরে রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী এবং ফরাসি প্রেসিডেন্টের বাংলাদেশ সফর নতুন মাত্রা যোগ করেছে। এর আগে গণতন্ত্র, মানবাধিকার, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা, আইনের শাসনের প্রশ্নে বিদেশি বিশেষ করে মার্কিন নেতৃত্বাধীন পশ্চিমা শক্তি এবং জাতিসংঘের মতো নানা আন্তর্জাতিক সংস্থার অবস্থান অনেকটাই বিরোধীদের অনুকূলে ছিল। সরকার বিপাকে পড়েছে বলে মনে হচ্ছিল। অন্যদিকে, চীন ও রাশিয়ার অবস্থান ছিল সরকারঘেঁষা। এই বাস্তবতায় নিকটতম প্রতিবেশী ভারতের চুপ থাকা সরকারের অস্বস্তি বাড়াচ্ছিল। এ পরিস্থিতিতে জি-২০ সম্মেলন ও এর আগে-পরে দুই বিদেশি অতিথির আগমনকে সরকার বিরোধী প্রচারণার জবাব হিসেবে ব্যবহার করেছে। এখানেই প্রশ্নের জন্ম হয়েছে। আমরা জানি বিদেশি রাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্ককে ভূ-রাজনীতি ও ভূ-অর্থনীতির সাপেক্ষে জাতীয় স্বার্থে ব্যবহার করাই পররাষ্ট্রনীতি ও কূটনীতির উদ্দেশ্য। কিন্তু দুঃখজনক যে, বাংলাদেশের বাস্তবতায় একে প্রচার-প্রচারণায় ব্যবহার করা হচ্ছে কেবল দলীয় রাজনীতির সাপেক্ষে। দেশের কূটনৈতিক সক্ষমতা অর্জনের চেয়ে দলীয় রাজনীতিই যেন বড়!
রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই লাভরভের বাংলাদেশ সফরের কথাই ধরা যাক। রাশিয়ার অর্থায়ন ও সহযোগিতায় রূপপুরের পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের কাজ এগিয়ে চললেও ইউক্রেন যুদ্ধের ফলে জাহাজ চলাচল ও অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞার কারণে তা প্রায়ই নানা পরিস্থিতির মধ্যে পড়ছে। এখানে কোন কারেন্সিতে অর্থায়ন হবে অথবা বাণিজ্য হবে সে বিষয়ে আমরা কিছু জানি না, কিন্তু প্রায়ই দেখা যাচ্ছে রুশ জাহাজ নিষেধাজ্ঞার কারণে পণ্য নিয়ে আসতে পারছে না অথবা লেনদেনে সমস্যা হচ্ছে। আরেকটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয় ছিল খাদ্য নিরাপত্তা। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ যতক্ষণ পর্যন্ত না থামছে ততক্ষণ সারা বিশ্বের জন্যই খাদ্য নিরাপত্তা বিঘ্নিত হতে থাকবে। এ নিয়ে কি কোনো সাফল্য আছে? সম্প্রতি গম আমদানিতে সৃষ্ট সমস্যার কি কোনো সমাধান হয়েছে? রোহিঙ্গা ইস্যুতেও বাংলাদেশের পক্ষে রাশিয়াকে তেমন শক্ত অবস্থান নিতে দেখা যায় না। রোহিঙ্গা সমস্যা সৃষ্টিকারী মায়ানমারের বড় কৌশলগত মিত্র রাশিয়া। এ বিষয়ে রাশিয়ার ভূমিকা ঐতিহাসিকভাবেই বাংলাদেশ আশা করতে পারে। কিন্তু এ নিয়ে কী আলোচনা হলো?