সুষ্ঠু নির্বাচন দেশের মানুষের অধিকার
কালবেলা: রাজনৈতিক সহিংসতা আবারো দেখা যাচ্ছে। নির্বাচনের সময় এলেই এমন প্রবণতাকে আপনি কীভাবে দেখেন?
অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ: একটি দেশের সরকারের ক্ষমতাগ্রহণ যদি সুষ্ঠুভাবে হয়, দেশের সব রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান যদি ঠিকমতো কাজ করে তাহলে সেখানে দ্বন্দ্ব-সংঘাত হওয়ার কিছু নেই। একটি নির্দিষ্ট সময় পরপর নির্বাচন হবে। স্বচ্ছতার সঙ্গে নির্বাচন হবে। মানুষ নির্বিঘ্নে ভোট দেবে। ভোটের মাধ্যমে যারা ক্ষমতায় আসবে তারা দেশ চালাবে। আবার একটি নির্দিষ্ট সময়ে নির্বাচন হবে এবং নিয়মতান্ত্রিকভাবে ক্ষমতা হস্তান্তর হবে। দেশে এই ধারাবাহিকতা থাকলে সংঘাতের কোনো প্রশ্ন আসবে না। বাংলাদেশের ক্ষেত্রে সমস্যাটি হচ্ছে, নির্বাচন এবং ক্ষমতা হস্তান্তরের এই ধারাবাহিকতাটি বা এই প্রাতিষ্ঠানিক প্রক্রিয়াটা অকার্যকর হয়ে গেছে। নির্দিষ্ট সময় পরপর একটি নির্বাচনের নিশ্চিত ব্যবস্থা বা প্রাতিষ্ঠানিক প্রক্রিয়া কাজ না করার কারণে অবিশ্বাস, অনাস্থা, দ্বন্দ্ব-সংঘাত প্রভৃতির সৃষ্টি হয় যা থেকে শেষ পর্যন্ত ক্ষতিগ্রস্ত হয় দেশ ও সাধারণ মানুষ।
এই সংঘর্ষিক পরিস্থিতি থেকে উত্তরণে সবচেয়ে বড় দায়িত্ব সরকারের। রাষ্ট্রীয় সব প্রতিষ্ঠান সরকারের হাতে এবং আইনগত এখতিয়ারও বেশি সরকারের। এ ছাড়া মিডিয়ার ওপরেও সরকারের যথেষ্ট প্রভাব। সুতরাং এই বিপজ্জনক পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের জন্য সরকারের ভূমিকাই প্রধান।
আসলে বর্তমানে উদ্ভূত সাংঘর্ষিক পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে সরকারের অগণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় ক্ষমতায় দখল করে রাখার কারণে। একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা তৈরির দাবিতে সরকারের বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো রাস্তায় নেমেছে, যেখানে ব্যাপকভাবে সাধারণ মানুষের অংশগ্রহণ রয়েছে। একটি সুষ্ঠু নির্বাচন যে কোনো দেশের মানুষের অধিকার। সরকার এই অধিকার হরণ করে তাকে দমন করার চেষ্টা করছে। বর্তমান সরকার ক্ষমতায় এসেছে ২০০৮ সালে নির্বাচনের মাধ্যমে। সেই নির্বাচনটি গ্রহণযোগ্য ছিল। বিপুল ভোটে এই সরকার ক্ষমতায় এসেছিল। কিন্তু এরপর দুবারের কোনোবারই তারা গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতায় আসেনি। তাই এখন তারা ‘মেয়াদোত্তীর্ণ’।
সুতরাং সংকট সমাধানের জন্য একটি গ্রহণযোগ্য নিরপেক্ষ সরকারের অধীনেই নির্বাচন হওয়া দরকার। একটি মেরুদণ্ডসম্পন্ন নির্বাচন কমিশন হওয়া দরকার। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সরকারি বাহিনী না হয়ে রাষ্ট্রীয় বাহিনী হওয়া দরকার। আমলাতন্ত্র এবং রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠানগুলো সরকারের প্রতিষ্ঠান না হয়ে রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান হিসেবে কাজ করা দরকার। সংবিধানের গণতান্ত্রিকীকরণ দরকার। এসব পরিবর্তনগুলো আনা দরকার এবং তার জন্য সর্বজনের আস্থাশীল একটি নির্বাচন প্রক্রিয়ায় নির্বাচিত সরকার ক্ষমতায় আসতে হবে।