চলনবিলের উড়াল পাখা
চলনবিল জনপদের মানুষের মুখে মুখে কত যে উপকথা ছড়িয়ে আছে, তার হিসাব করা দুরূহ। উত্তর জনপদের ঐতিহ্যবাহী চলনবিল হতে পারে, আকর্ষণীয় পর্যটন কেন্দ্র। নাটোরের গুরুদাসপুর উপজেলার খুবজিপুরে অসংখ্য গ্রন্থপ্রণেতা মরহুম অধ্যক্ষ আব্দুল হামিদের হাতে গড়া ‘চলনবিল জাদুঘর’ এ অঞ্চলের একটি গুরুত্বপূর্ণ দর্শনীয় স্থান। জাদুঘরে আছে সুলতান নাসির উদ্দিনের নিজ হাতে লেখা কুরআন শরিফ। গাছের ছালে বাংলায় লেখা প্রাচীন পুঁথিসহ অসংখ্য সামগ্রী। প্রায় ৩৫০ বছর আগে সিংড়া উপজেলার ডাহিয়া এলাকায় ইসলাম প্রচার করতে আসা ঘাসী-ই-দেওয়ানের তিশিখালীর মাজার। প্রতি শুক্রবার হাজার হাজার লোকের সমাগম ঘটে। এখানে আনোয়ারা উপন্যাসের লেখক নজিবর রহমানের মাজার। রায় বাহাদুরের বাড়ির ধ্বংসস্তূপ। দেশের বৃহত্তম গোবিন্দ মন্দির, কপিলেশ্বর মন্দির, বারুহাসের ইমামবাড়ি, শীতলাইয়ের জমিদারবাড়ি। হা-িয়ালের জগন্নাথ মন্দির। রায়গঞ্জের জয়সাগর মৎস্য খামার। চাটমোহরের হরিপুরের লেখক প্রমথ চৌধুরী ও বড়াইগ্রামের জোয়াড়ীতে লেখক প্রমথনাথ বিশীর বাড়িসহ অসংখ্য দর্শনীয় স্থান বুকে ধারণ করে আছে চলনবিল।
চলনবিলের জনপদে অসংখ্য প্রাচীন মসজিদ, মন্দির, মাজার, জলা রয়েছে। সেগুলো ঘিরে রয়েছে নানা ইতিকথা, বিশ্বাস। বিলপাড়ের তারাশ উপজেলার নবগ্রামে নওগাঁ শাহি মসজিদ (মামার মসজিদ) ও ভাগ্নের মসজিদ নামে দুটি মসজিদ রয়েছে। মামার মসজিদটির পাশেই হজরত শাহ শরিফ জিন্দানির (রহ.) মাজার অবস্থিত। অনেকেই বলেন, মসজিদটি তিনিই নির্মাণ করেছিলেন। জনশ্রুতি আছে, তিনি বাঘের পিঠে সওয়ার হয়ে বাগদাদ থেকে এ দেশে ষোড়শ খ্রিস্টাব্দে এসেছিলেন ইসলাম প্রচারের জন্য। রাজা ভানসিংহের সময় তার আগমন হয় বলে জানা যায়। রাজা ভানসিংহের পারিষদবর্গ ও তার ঠাকুরেরা দলে দলে ইসলাম ধর্মে দীক্ষিত হওয়ায় তিনি তার খিড়কি পুকুরে ডুবে প্রাণ বিসর্জন দেন বলে কথিত আছে। এখনো ভানসিংহের খিড়কি পুকুর রয়েছে। মামার মসজিদের পাশে ভাগ্নের মসজিদ নিয়ে নানা উপকথা শোনা যায়। কোনো এক ভাগ্নে মামার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে এক রাতে নাকি মসজিদ করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু রাতের মধ্যে ছাদ দেওয়া সম্ভব হয়নি, তাই সেটি ছাদবিহীন অবস্থায় ছিল। কেউ বলে, সেই ভাগ্নে ওই রাতেই মারা যাওয়ায় মসজিদটির নির্মাণ অসম্পূর্ণ থাকে।