নহি যন্ত্র নহি যন্ত্র ... আমি সাংবাদিক
মহাভারতের পৌরাণিক যুগে অদ্ভুত দুই ‘সাংবাদিক’ পাই আমরা। একজনের নাম নারদ, অন্যজন সঞ্জয়। খবর রটেছে, হাল আমলের সাংবাদিকতায় নাকি নারদ আর সঞ্জয় ফিরে এসেছে! কীভাবে? গণমাধ্যম যখন ক্রমেই গণ থেকে দূরে সরে যাচ্ছে, তখনই মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা হিসেবে আবির্ভূত হলো ‘কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা’র রোবট সাংবাদিক। এ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ সাইট তো বটেই, গবেষণাপাড়াও হইচইয়ে মুখর। সাংবাদিকতা কি ‘গণ’র থাকবে? সাংবাদিককে দেখে পাঠক-দর্শক-শ্রোতা এবার কি তাহলে বলে উঠবে– ‘শরীর শরীর শরীর, তোমার মন নাই কুসুম?’
পৌরাণিক দুই সাংবাদিকের কাছে ফিরে যাই। নারদ; মহাভারতের ধ্বনিচিত্র সম্প্রচারক (অডিওভিডিও টেলিকাস্টার)। সঞ্জয়; সরাসরি তথ্য সম্প্রচারক (লাইভ টেলিকাস্টার)। স্বর্গ-মর্ত্য-পাতালজুড়ে যে বিশেষ প্রতিনিধি খবর সংগ্রহ ও পরিবেশন করতেন তিনি নারদ! হিন্দিতে ‘নারাহ’ মানে স্লোগান। তাহলে নারা+দ= নারদ। ‘দ’ মানে ‘যে দেয়’। অর্থাৎ, যিনি স্লোগান দেন বা ধ্বনি দেন। নারদ মুনি হলেন মিথলজির বুকে প্রথম ধ্বনিচিত্রের সম্প্রচারক! এদিকে মহাভারত মিথলজিতে হস্তিনাপুরে বসে সুদূর কুরুক্ষেত্র যুদ্ধের সরাসরি বর্ণনা দিয়েছিলেন অন্ধ মহারাজা ধৃতরাষ্ট্রের অনুচর সঞ্জয়। সঞ্জয়ের কাজ ছিল রাজসভায় বসে বসে প্রতিদিন যুদ্ধের ‘লাইভ আপডেট’ দেওয়া। সঞ্জয় হুবহু পক্ষপাতহীন বর্ণনা দিয়েছিলেন যুদ্ধের। তাই গীতায় শ্লোকে শ্লোকে বলা আছে ‘সঞ্জয় উবাচ’। সেই হিসেবে সঞ্জয় ইতিহাসের প্রথম সরাসরি সম্প্রচারক।
রোবটের মতো সংবাদ প্রচার করতেন নারদ। কিন্তু ভুল হলে ক্ষমাও চাইতেন। নারদ দেবতাদের পক্ষ নিতে গিয়ে সংবাদের বস্তুনিষ্ঠতাও হারাতেন মাঝেমধ্যে। ওদিকে সঞ্জয় ক্লান্তিহীনভাবে অপ্রিয় যুদ্ধবৃত্তান্ত রাজাকে শুনিয়ে গেছেন। মহাভারত তথা পুরাণ পাঠের ভূমিকা এখানেই যে, আজকের সংবাদমাধ্যমে চলে এসেছে পৌরাণিক বর্ণনার মতো রোবটিক সংবাদ পাঠক। যাকে বলি তোতা পাখি। সাংবাদিকতাকে এখন রাষ্ট্রের তিনটি এজেন্ডার সঙ্গে লড়তে হচ্ছে। বিজ্ঞাপন, রাজনৈতিক পক্ষপাতমূলক অবস্থান গ্রহণ এবং মালিকানার স্বার্থ। ফলে সাংবাদিকতার প্রথাগত নৈতিকতার প্রাচীন দেয়ালগুলো ভেঙে যাচ্ছে।