রাজনৈতিক ও পরিচালকদের হস্তক্ষেপের দরুন ব্যাংক খাতের আজকের দুর্দশা
মামুন রশীদ প্রথিতযশা ব্যাংকার ও অর্থনীতি বিশ্লেষক। স্নাতকোত্তর ডিগ্রি নিয়েছেন অর্থনীতি ও ব্যবসায় প্রশাসনে। ২৫ বছরের অধিক সময় কাজ করেছেন বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় তিনটি আন্তর্জাতিক ব্যাংকে—দেশে ও বিদেশে। ছিলেন সিটিব্যাংক এনএ বাংলাদেশের প্রথম স্থানীয় প্রধান নির্বাহী এবং বাংলাদেশের বাণিজ্যিক ব্যাংকিংয়ের ইতিহাসে এ পর্যন্ত কনিষ্ঠতম প্রধান। ব্যাংকিংয়ে অভিনবত্ব ও উৎকর্ষের জন্য পেয়েছেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের স্টেট ডিপার্টমেন্টের ‘করপোরেট এক্সিলেন্স’ অ্যাওয়ার্ড। ব্যাংকিংসহ ব্যবসায় প্রশাসনের বিভিন্ন বিষয়ে পড়াচ্ছেন প্রায় ৩০ বছরের অধিককাল। দেশে-বিদেশে বিভিন্ন গণমাধ্যম ও প্রকাশনায় ব্যাংকিং এবং সামষ্টিক অর্থনীতি নিয়ে ছাপা হয়েছে তার অনেক লেখা ও সাক্ষাৎকার। সম্প্রতি তিনি বাংলাদেশের বর্তমান অর্থনৈতিক সংকট ও আর্থিক খাত নিয়ে বণিক বার্তার নানা প্রশ্নের উত্তর দিয়েছেন। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন সাবিদিন ইব্রাহিম
সারা বিশ্বেই ব্যাংক ও আর্থিক খাত রূপান্তরের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। বাংলাদেশের ব্যাংক খাতের ভবিষ্যৎ কোন পথে?
যুক্তরাষ্ট্রের তিনটি ব্যাংক দেউলিয়া হওয়ার পাশাপাশি সুইজারল্যান্ডের দ্বিতীয় বৃহত্তম ব্যাংক ক্রেডিট সুইসের পতনে প্রকাশ পাচ্ছে বিশ্বের আর্থিক খাতের দুরবস্থার চিত্র। শেষ মুহূর্তে প্রতিদ্বন্দ্বী ইউবিএস এজির কাছে বিক্রি করে দেয়ার মাধ্যমে ব্যাংকটির দেউলিয়াত্ব ঠেকানো গেলেও তা খাদের কিনারায় থাকা পশ্চিমা ব্যাংকিং ব্যবস্থাকে কতটা উদ্ধার করবে তা এখনো পরিষ্কার নয়। অনেকটা আকস্মিকভাবেই সিলিকন ভ্যালিসহ তিন ব্যাংকের পতনে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে মার্কিন আর্থিক ব্যবস্থায়। যার ধাক্কা অনুভূত হয় এশিয়া, ইউরোপের প্রধান সব পুঁজিবাজারেই। দেশের অর্থনীতিবিদরা বলছেন, বাংলাদেশের ব্যাংকগুলো এখনো দেউলিয়া না হলেও আসলে সেগুলোয় অনেক সমস্যা রয়েছে। আর এসব সমস্যার অনেকগুলো এরই মধ্যে বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমেও চোখে পড়েছে। অর্থনীতিবিদরা মোটা দাগে কয়েকটি সমস্যা চিহ্নিত করেছেন। যার মধ্যে অন্যতম বড় সমস্যা হচ্ছে অনাদায়ী বা খেলাপি ঋণ। বাংলাদেশে এ সমস্যা আসলে নতুন কিছু নয়। বছরের পর বছর ধরে এটি চলে এলেও এ সমস্যার সমাধানে খুব একটা ব্যবস্থা নেয়া হয় না। এর আগে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) বলেছিল যে বাংলাদেশে বিতরণকৃত ঋণের এক-তৃতীয়াংশই খেলাপি। তবে বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ প্রকাশিত পরিসংখ্যান বলছে, ২০২২ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত দেশে খেলাপি ঋণের পরিমাণ ১ লাখ ৩৪ হাজার কোটি টাকা, যা মোট প্রদত্ত ঋণের ৯ দশমিক ৩৬ শতাংশ। আন্তর্জাতিক মান অনুযায়ী, কোনো দেশে খেলাপি ঋণের পরিমাণ ২-৩ শতাংশের বেশি হওয়া উচিত নয়। ২০২১ সালের সেপ্টেম্বরে বাংলাদেশে খেলাপি ঋণের পরিমাণ ছিল ১ লাখ ১ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। এ হিসাব অনুযায়ী, এক বছরের ব্যবধানে দেশে খেলাপি ঋণ বেড়েছে সাড়ে ৩২ হাজার কোটি টাকা। শতকরা হিসাবে এটি ৩২ দশমিক ৮৭ শতাংশ। ২০২২ সালের জুন পর্যন্ত রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর খেলাপি ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৬০ হাজার কোটি টাকার বেশি। এসব ব্যাংকের বিতরণকৃত ঋণের ২৩ শতাংশই খেলাপি। একই সময়ে দেশের বেসরকারি ব্যাংকের খেলাপি ঋণের পরিমাণ ছিল ৬৬ হাজার ৬৯৫ কোটি টাকা, যা কিনা এসব ব্যাংকের মোট ঋণের ৬ দশমিক ২০ শতাংশ।
- ট্যাগ:
- মতামত
- ব্যাংক খাত
- দুর্দশা