বর্তমানে মানব সভ্যতা যে চরম এক দুর্দশার মধ্য দিয়ে চলেছে, তা নিয়ে বিতর্কের কোনো অবকাশ নেই। যখন মানুষ ভীষণ রকম অসহিষ্ণু হয়ে উঠেছে; একে অন্যকে হত্যা করছে; ধনীর অহংকার ছিনিয়ে নিচ্ছে গরিবের সম্মান; তখন নিশ্চয় আমরা বলে উঠব না– আমাদের যা হচ্ছে, ভালোই হচ্ছে। অমর্ত্য সেন বলেছিলেন, ‘একজনের সুখ নির্ভর করে আরেকজনের সুখের ওপর।’ সেই কথাটা আমরা জানি কিন্তু মানি কি? বস্তুত, ‘যা হয় তা মঙ্গলের জন্যই হয়’– এমন কথার ভেতরে লুকিয়ে থাকে সীমাহীন কুসংস্কার।
যে নদী নিজের মতো করে পথ চলে, তাকে অনিয়ন্ত্রিতভাবে বাঁধ দিলে যে বন্যা হয়, তার দায় প্রকৃতির, না মানুষের? নদীর জল আপন নিয়মে পথ পরিবর্তন করে; বাঁক নেয়। কিন্তু তার নিজস্ব পথ পরিবর্তনের মধ্যে প্রকৃতির নিয়মকে ভাঙার কোনো বিষয় নেই। কিন্তু এখানেই কিছু শক্তিশালী মানুষ, সংগঠিত রাষ্ট্র তাদের নিজস্ব নীতি অনুযায়ী নদীর সেই জলকে বেঁধে ফেলে। ফলে নদীতে চরা পড়ে। বন্যার আশঙ্কা তৈরি হয়। তেমন কোনো বন্যার সৃষ্টি হলে আমরা বলি প্রাকৃতিক বিষয়। এর ওপর আমাদের হাত নেই। কিন্তু আমাদের হাত আছে বলেই তো প্রকৃতি এতদিন সহ্য করতে করতে একদিন এসে সব ওলটপালট করে দিল। অর্থাৎ আমরা প্রকৃতির কাছ থেকে কী আশা করি? আমরা প্রকৃতিকে নিজেদের মতো অত্যাচার করে যাব; নিজেদের অধিকারবোধ অনুযায়ী নষ্ট করে যাব, কিন্তু প্রকৃতি কোনো রকমেই প্রতিবাদ জানাবে না?