বিদ্যুৎ সংকটের কারণ প্রভাব ও সম্ভাব্য প্রতিকার
বাংলাদেশের বিদ্যুৎ ব্যবহারের সঙ্গে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ও উন্নয়নের সমানুপাতিক সম্পর্ক রয়েছে। অর্থনীতিবিদরা মনে করেন, একটি দেশের মাথাপিছু বিদ্যুৎ ব্যবহার যত বাড়বে, সেই দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন তত বেশি হবে। ২০২০-২১ অর্থবছরের পরিসংখ্যান অনুসারে, বাংলাদেশে মোট বিদ্যুতের ৫৬ শতাংশ বাসাবাড়িতে, ২৮ শতাংশ শিল্পে, ২ শতাংশ কৃষিতে ও ১২ শতাংশ ব্যবহার হয় বাণিজ্যিক খাতে।
বাংলাদেশের পাওয়ার ডেভেলপমেন্ট বোর্ডের তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা গিয়েছে, দেশে প্রতিদিন বিদ্যুৎ চাহিদা স্বাভাবিক সময়ে সাড়ে ১১ হাজার থেকে ১২ হাজার মেগাওয়াট, তবে চলতি বছরে দাবদাহের কারণে চাহিদা তৈরি হয় ১৬ থেকে সাড়ে ১৬ হাজার মেগাওয়াট। এই সময়ে প্রতিদিন বিদ্যুৎ উৎপাদন হয়েছে ১৩-১৪ হাজার মেগাওয়াট। ঘাটতি থেকেছে আড়াই হাজার মেগাওয়াটের বেশি। বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য বাংলাদেশকে মূলত প্রাকৃতিক গ্যাস, জ্বালানি তেল, কয়লা ও সোলার এনার্জির ওপর নির্ভর করতে হয়। বর্তমানে বাংলাদেশে মোট বিদ্যুতের ৫১ শতাংশ উৎপাদন হয় প্রাকৃতিক গ্যাস থেকে, ২৬ শতাংশ উৎপাদন হয় ফার্নেস অয়েল থেকে ও বাকি অংশ উৎপাদন হয় অন্যান্য উৎস থেকে। বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য সবচেয়ে সাশ্রয়ী ও সহজলভ্য জ্বালানি হলো প্রাকৃতিক গ্যাস। একসময় বাংলাদেশের বিদ্যুতের ৮০ শতাংশ উৎপাদন হতো প্রাকৃতিক গ্যাস থেকে, বর্তমানে তা কমে ৫১ শতাংশে নেমেছে। এর অন্যতম প্রধান কারণ পেট্রোবাংলা নতুন কোনো গ্যাসক্ষেত্র আবিষ্কার করতে পারেনি এবং নতুন গ্যাসক্ষেত্র অনুসন্ধানে পর্যাপ্ত উদ্যোগের অভাব। বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য তরল প্রাকৃতিক গ্যাস (লিকুইফায়েড ন্যাচারাল গ্যাস- এলএনজি) বাংলাদেশে ব্যবহার হয়। কিন্তু রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে তরল প্রাকৃতিক গ্যাসের মূল্য দুই থেকে চার গুণ পর্যন্ত বেড়ে যাওয়ায় বিদ্যুৎ উৎপাদনে সংকট তৈরি হয়েছে। তাছাড়া জনসংখ্যা বৃদ্ধির সঙ্গে বিদ্যুতের চাহিদা বেড়েছে, কিন্তু বিদ্যুৎ উৎপাদন সে তুলনায় বাড়েনি।
- ট্যাগ:
- মতামত
- বিদ্যুৎ
- সংকট
- বিদ্যুৎ সংকট