বিদ্যুৎ যায় না, মাঝে মাঝে আসে
গত সপ্তাহে গ্রামের বাড়িতে গিয়েছিলাম। বাস থেকে নামতেই দেখা এক ছোট ভাই সৈয়দ হোসেনের সঙ্গে। জিজ্ঞেস করলাম, ‘কিরে, এখানে কারেন্ট যায় কেমন?’ গ্রামের মানুষ বিদ্যুৎকে ‘ইলেকট্রিসিটি’ না বলে কারেন্টই বলে। আমিও তাই বললাম। সৈয়দ বলল, ‘দাদা, আমাদের এখানে কারেন্ট এখন আর যায় না, মাঝে মাঝে আসে।’ এ বাক্যটি এখন সবাই বলে। এ যেন এক ধ্রুব সত্যে পরিণত হয়েছে।
বিদ্যুতের এই যাওয়া-আসা বাল্যকালে স্কুলপাঠ্য বইয়ে পড়া ‘ফুয়াদের গল্প বলা’ গল্পটির কথাই মনে করিয়ে দেয়। এক বাদশাহ শাহজাদার বন্ধু নির্বাচনের জন্য অনেক ছেলেকে ডাকলেন পরীক্ষা করবেন বলে। একজন বুদ্ধিমান ও সাহসী ছেলে দরকার শাহজাদার বন্ধু হিসেবে।
অনেকেই এল। বাদশাহ সবাইকে গল্প বলতে বলেন। তারা বলে। কিন্তু কাউকেই বুদ্ধিমান বলে মনে হয় না বাদশাহর। সবশেষে এল ফুয়াদ নামের চটপটে এক কিশোর। বাদশাহ তাকে গল্প বলতে বললেন। সে গল্প বলা শুরু করল—এক দালানে একটি চড়ুই পাখির বাসা ছিল।
চড়ুই দুটি সারা দিন যাওয়া-আসা করে। এই আসে, আবার ফুড়ুৎ করে উড়ে যায়। এটুকু বলে ফুয়াদ থামল। বাদশাহ বললেন, ‘তারপর?’ ফুয়াদ বলল, ‘ফুড়ুৎ।’ বাদশাহ বললেন, ‘তারপর?’ ফুয়াদ বলল, ‘তারপরও ফুড়ুৎ।’ এভাবে বেশ কিছুক্ষণ চলার পর বাদশাহ জিজ্ঞেস করলেন, ‘ফুড়ুৎ আর কতক্ষণ চলবে?’ ফুয়াদ জবাব দিল, ‘চড়ুই পাখি যতক্ষণ যাওয়া-আসা করবে, ফুড়ুৎও ততক্ষণ চলবে।’ বাদশা খুশি হলেন। দেখলেন, এ ছেলের যেমন বুদ্ধি আছে, তেমনি সাহসও আছে। বাদশাহ তাকেই শাহজাদার বন্ধু নির্বাচন করলেন।
গল্পে উড়ে যেত চড়ুই পাখি, আর আমাদের দেশে এখন বলা নেই, কওয়া নেই চলে যায় বিদ্যুৎ। সেদিন দেখলাম ফেসবুকে এক রসিক ভদ্রলোক লিখেছেন, ‘ভালোভাবে গরমটাকেও উপভোগ করতে পারছি না। মাঝে মাঝে বিদ্যুৎ মিয়া এসে ডিসটার্ব করে।’ মানুষ কতটা অতিষ্ঠ হলে এ ধরনের শ্লেষ মিশ্রিত বাক্য তৈরি ও প্রচার করে তা উপলব্ধি করা কষ্টকর নয়। তা ছাড়া সবাই যেখানে ভুক্তভোগী, সেখানে বলবেই বা কী।
আধুনিক জীবনযাত্রায় বিদ্যুতের আবশ্যকতা বলে বোঝানোর দরকার পড়ে না। বিদ্যুৎ ছাড়া জীবনই অচল। বিদ্যুৎ না থাকলে লাইট জ্বলে না, পাখা ঘোরে না, ছাদের ট্যাংকে পানি তোলা যায় না। প্রচণ্ড গরমে মানুষ হাঁসফাঁস করে। একসময় আমাদের দেশে গ্রামগঞ্জে বিদ্যুৎ ছিল না। গ্রামাঞ্চলের মানুষ বিদ্যুতের ওপর নির্ভরশীলও ছিল না। কিন্তু এখন তো সারা দেশে বিদ্যুৎ-সংযোগ দেওয়া হয়েছে। ফলে মানুষ অভ্যস্ত হয়ে গেছে বিদ্যুতের ব্যবহারে। মানুষ তো অভ্যাসের দাস। আমরা যখন স্কুলে পড়তাম, তখন রাতের বেলা কুপি কিংবা হারিকেন জ্বালিয়ে পড়তে বসতাম। ওই স্বল্প আলোতেই সবাই যার যার কাজ সারত। মাথার ওপর ফ্যান ঘুরত না। ঘুমাত হাতে তালের পাখা নিয়ে।
কিন্তু এখন সময় বদলেছে। ‘ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ’ দেওয়ার কথা বলা হয়েছে। এমনকি শতভাগ বিদ্যুৎ উৎপাদনের খুশিতে লাখ টাকার বাজিও পোড়ানো হয়েছে। তাহলে সেই শতভাগ বিদ্যুৎ গেল কোথায়? খবর বেরিয়েছে, কয়লার বকেয়া পরিশোধ না করায় রপ্তানিকারক দেশ কয়লা দেয়নি। তাই বন্ধ হয়ে গেছে দেশের সর্ববৃহৎ বিদ্যুৎ উৎপাদনকেন্দ্র পায়রা বিদ্যুৎকেন্দ্র। এ নিয়ে মানুষ সামাজিক মাধ্যমে ট্রল করছে।