পিতৃতান্ত্রিকতার অবরোধ ও ইতিহাসের মুক্তি
শিরোনামটি যে আড়ম্বরপূর্ণ তাতে সন্দেহ কী; অবরোধ ও মুক্তি কথা দুটি সরল হলেও পিতৃতান্ত্রিকতার সঙ্গে অবরোধের যোগ এবং ইতিহাসের সঙ্গে মুক্তির সংস্থাপন অস্পষ্টতা তৈরি করবেই এবং করছেও। তবু পিতৃতান্ত্রিকতার সঙ্গে ইতিহাসের মুক্তির যে একটা বৈরী সম্পর্ক রয়েছে সেটা খুবই সত্য। ইতিহাসের মুক্তি পিতৃতান্ত্রিকতার দ্বারা নানাভাবে অবরুদ্ধ হয়েছে, হচ্ছে এবং হতে থাকবে, যদি না যে ব্যবস্থার দরুন অবরোধ সম্ভব হচ্ছে সেটিকে ভেঙে ফেলা যায়।
তা ইতিহাসের মুক্তির কথা তো বলছি, কিন্তু ওই বস্তুটা কী তা ঠিক করে নেওয়া চাই প্রথমেই। ইতিহাসের মুক্তি বলতে রাজা-বাদশা বিশেষ শ্রেণী বা গোষ্ঠীর মুক্তির কথা অবশ্যই বোঝাচ্ছি না। বোঝাচ্ছি মানুষের সমষ্টিগত মুক্তি। মানুষই ইতিহাস গড়ে, ফলে সভ্যতা এগোয়, কিন্তু তাই বলে মানুষ যে মুক্ত হয়, তা নয়। পিতৃতান্ত্রিকতা মুক্তির অন্তরায় হয়ে দাঁড়ায়।
এই পিতৃতান্ত্রিকতার সঙ্গে পুরুষতান্ত্রিকতার মিল আছে বলে মনে হবে, কিন্তু দু'টি মোটেই এক বস্তু নয়, মৌলিক পার্থক্য রয়েছে। পিতার ভাবমূর্তি একজন পুরুষেরই এবং পুরুষতান্ত্রিকতা হচ্ছে পুরুষের কর্তৃত্ব নারীর ওপরে; কিন্তু পিতৃতান্ত্রিকতা যে কেবল নারীর জন্য কর্তা নয়, তা নয়। কর্তা নয় পুরুষের ক্ষেত্রেও। পুরুষ ও নারী উভয়েই পিতৃতান্ত্রিকতার অধীনে থাকে, বাধ্য হয় থাকতে। তবে হ্যাঁ, নারী ও পুরুষের ভেতর একটা পার্থক্য করা হয়। সেটা ওই পিতৃতান্ত্রিকতাই করে দেয় এবং সে-জন্য পিতৃতান্ত্রিকতার দুর্ভোগটা পুরুষের তুলনায় নারীকেই পোহাতে হয় অধিক মাত্রায়।