সামাজিক সুরক্ষায় বরাদ্দ বেশি দেখানোই যথেষ্ট?
মূল্যস্ফীতি পরিস্থিতি ভালো নয়। এতে দারিদ্র্যসীমার আশপাশে ঘোরাঘুরি করা অনেকেই নেমে যাবে নিচে। এ অবস্থায় ঝুঁকিপূর্ণ জনগোষ্ঠীকে ধরে রাখার প্রয়াস নিতে হয় বাজেটে। কর্মসংস্থান বাড়িয়ে মূল্যস্ফীতি সামলানোর সঙ্গে দারিদ্র্য নিয়ন্ত্রণের চেষ্টাও হয়ে থাকে। এ জন্য নতুন বাজেটে সরকার কী পদক্ষেপ নিচ্ছে, সেটা বড় বিবেচ্য। একটি গুরুত্বপূর্ণ বিবেচনা হলো সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচি। একটা সময় পর্যন্ত এগুলো কোনো ঘোষিত কৌশলের আওতায় পরিচালিত হতো না। ক’বছর আগে এ কারণেই জাতীয় সামাজিক নিরাপত্তা কৌশল গৃহীত হয়। বলা হয়েছে, এখন থেকে আরও সংগঠিতভাবে কর্মসূচি বাস্তবায়ন হবে, যাতে দরিদ্রদের সঙ্গে ঝুঁকিপূর্ণরাও উপকৃত হয় এবং নিজেদের আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন ত্বরান্বিত করার শক্তি পায়। বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে পরিচালিত এসব কর্মসূচিতে বাজেটের উল্লেখযোগ্য অংশ ব্যয় হচ্ছে এবং সরকারের ভাষ্য হলো, তাতে এগিয়ে যাওয়া যাচ্ছে ঘোষিত লক্ষ্য অর্জনের পথে।
সম্প্রতি বিবিএস প্রকাশিত খানা আয় ও ব্যয় জরিপে (২০২২) গত ছ’বছরে দারিদ্র্য পরিস্থিতির বড় উন্নতি লক্ষণীয়। তাতে আর্থ-সামাজিক বৈষম্য বাড়লেও দারিদ্র্য ও চরম দারিদ্র্য কমেছে। সরকারি এই সংস্থার জরিপ বলছে, দীর্ঘ সময় ধরে করোনায় থাকা সত্ত্বেও দারিদ্র্য পরিস্থিতির বড় অবনতি হয়নি। অবনতির যে শঙ্কা ছিল; গৃহীত নানা পদক্ষেপে তা নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব হয়েছে বলে এখন দাবি করতে পারে সরকার। অর্থনীতির পুনরুদ্ধার কার্যক্রমও দ্রুত সুফল দিয়েছে বলে দাবি করা যাবে। শ্রমশক্তি নিয়ে ইতোমধ্যে পরিচালিত সংস্থাটির পৃথক জরিপ অনুযায়ীও বেকারত্ব পরিস্থিতির অবনতি না ঘটে বরং উন্নতি হয়েছে।
যে কোনো জরিপ নিয়ে অবশ্য প্রশ্ন উঠতে পারে। কেননা, জরিপ পরিচালনার গ্রহণযোগ্য পদ্ধতি নিয়ে বিতর্ক রয়েছে। বেসরকারি সংস্থার জরিপ নিয়ে সরকারের তরফে প্রশ্ন তোলা হয় প্রায়ই। বিবিএসের জরিপও প্রশ্নবিদ্ধ হয়। সরকারের উচ্চ পর্যায়েও এর বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে পরস্পরবিরোধী মত প্রকাশ পেয়ে থাকে। তবে সরকারি সংস্থা পরিচালিত জরিপ থেকে প্রাপ্ত তথ্য-উপাত্ত সত্যের কাছাকাছি হওয়া প্রয়োজন। নইলে এর ভিত্তিতে গৃহীত পরিকল্পনা যথাযথ হবে না। পরিকল্পনা যথাযথ হলেও তার বাস্তবায়নে অনেক ঘাটতি থাকে। আর পরিকল্পনা বাস্তবভিত্তিক না হলে তো সমস্যা হয়ে ওঠে গুরুতর। এ অবস্থায় বেসরকারি সংস্থার জরিপ থেকে প্রাপ্ত তথ্য উড়িয়ে দেওয়ার প্রবণতা কাম্য নয়। আমাদের উন্নয়ন সহযোগীদের সহায়তায় সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠান পরিচালিত জরিপেও অনেক সময় অসংগতিপূর্ণ তথ্য পাওয়া যায়। পরিকল্পনা গ্রহণে সরকার তখন বিভ্রান্তিতে পড়ে বৈকি।