ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী : গণস্বাস্থ্যের পথিকৃৎ
একজন মহান মুক্তিযোদ্ধাকে হারালাম আমরা। তিনি একজন বড় মাপের চিকিৎসক সংগঠক ছিলেন। একজন দূরদর্শী চিন্তাবিদ ছিলেন। ছিলেন জাতির বিবেক। করোনাকালে তিনি যেমন গণমানুষের পাশে দাঁড়িয়েছিলেন, তেমনি অসংখ্য জাতীয় বিষয়ে প্রতিবাদে, সমর্থনে, আহ্বানে ছিলেন অগ্রজ।
আমাদের স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় ১৯৭১ সালের মার্চ মাসে ব্রিটেনে বসবাসরত এক হাজারেরেও বেশি বাংলাদেশি চিকিৎসক নিয়ে গঠিত বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী।
সেই বছরের মে মাসে বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশন ও যুক্তরাজ্য যৌথভাবে ডা. এমএ মবিন ও ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরীকে মুক্তিযুদ্ধে সহায়তা করার জন্য ভারতে পাঠায়। ডা. জাফরুল্লাহ তার এফারসিপিএস ডিগ্রি অর্জন অসমাপ্ত রেখে যুক্ত হন মুক্তিযুদ্ধে।
তারা মুজিব নগর সরকারের সহায়তায় ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের মেঘালয়ে ৪৮০ শয্যা বিশিষ্ট বাংলাদেশ ফিল্ড হাসপাতাল প্রতিষ্ঠা করেন। স্বাধীনতার পরে বাংলাদেশ ফিল্ড হাসপাতাল ঢাকার ইস্কাটনে পুনরায় স্থাপিত হয়।
পরবর্তীতে ১৯৭২ সালের এপ্রিলে গ্রামকে উন্নয়নের কেন্দ্রবিন্দু হিসেবে গড়ে তোলার জন্য হাসপাতালটি সাভারে স্থানান্তরিত হয় এবং নামকরণ করা হয় গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র।
এই কার্যক্রমটি বেশ কয়েকটি দেশীয় ও আন্তর্জাতিক পুরস্কার লাভ করে; ১৯৭৭ সালে স্বাধীনতা দিবস পুরস্কার, ১৯৮৫ সালে ম্যাগসাসে পুরস্কার, ১৯৯২ সালে সুইডেন থেকে রাইট লাইভহুড পুরস্কার এবং ২০২২ সালে বার্কলি বিশ্ববিদ্যালয় হতে ইন্টারন্যাশনাল হেলথ হিরো পুরস্কার লাভ করে। মহান এই মানুষটি স্বাধীনতার পর থেকে অর্ধ শতাব্দী বাংলাদেশের মানুষের সেবা করে গেলেন।