ঢাবি অধ্যাপকের বাঙালি, বাংলাদেশ ও বঙ্গবন্ধুর উপর অমার্জনীয় লেখনী

কয়েক সপ্তাহ আগে বিলেতের অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলাদেশে গণহত্যার ওপর গবেষণারত কয়েকজন আমার কাছে যে বইটি পাঠিয়েছিলেন, সেটি পড়ে আমার ভিমরি খাওয়ার দশা। বইটির লেখক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের একজন অধ্যাপক, নাম ইমতিয়াজ আহমেদ, যিনি আবার বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘সেন্টার ফর জেনোসাইড স্টাডিজ’-এর প্রধান। যে কটি বিষয় আমার ভিমরি খাওয়ার কারণ ঘটিয়েছিল, তার একটি হলো তার লেখা এই যে ১৯৭১ সালের ৭ই মার্চ বঙ্গবন্ধু ‘জয় বাংলা’ বলার পর ‘জয় পাকিস্তান’ বলে তার ভাষণ শেষ করেছিলেন। ‘হিস্টোরাইজিং ১৯৭১ জেনোসাইড: স্টেট ভার্সেস পারসন’ নামক বইয়ের ৪০ পৃষ্ঠায় উল্লিখিত অধ্যাপক ইমতিয়াজ লিখেছেন তিনি ১৯৭১ সালের ৭ই মার্চ বঙ্গবন্ধুর ভাষণ শোনার জন্য সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে নিজে হাজির হয়ে বঙ্গবন্ধুকে ‘জয় পাকিস্তান’ বলতে শুনেছেন। অধ্যাপক ইমতিয়াজ আহমেদের ইংরেজি ভাষায় লেখা বইয়ের উল্লিখিত অংশ বাংলায় তরজমা করলে যা দাঁড়ায়, তা নিম্নরূপ:


“পাকিস্তান শেখ মুজিবের ৭ই মার্চের ভাষণের জন্য তার ওপর দোষ চাপাতে পারত না, যেটি ছিল একজন রাজনৈতিক প্রতিভাবানের মাস্টার স্ট্রোক কেন না তিনি ঘোষণা করেছিলেন ‘এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম’। কিন্তু একই সাথে তিনি ‘জয় বাংলা, জয় পাকিস্তান’ বলে তাঁর ভাষণ শেষ করেছিলেন। এটা উল্লেখযোগ্য যে ‘ইনডেপেন্ডেন্স’-এর বাংলা শব্দ স্বাধীনতা হলেও, এই শব্দটির একাধিক অর্থ হতে পারে, যথা ফ্রিডম। তাই ওই ভাষণে স্বাধীনতার ঘোষণা ছিল, যেটি আন্তর্জাতিক আইনে অবৈধ, সেটি ভাবা ঠিক নয়।” তিনি আরও লিখেছেন, “এই বইয়ের লেখক সে সময়ের রেসকোর্স, বর্তমান সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ১৯৭১ সালের ৭ই মার্চ উপস্থিত ছিলেন বিধায় পুরো ভাষণটি শুনতে পেরেছিলেন। এটা উল্লেখ করা প্রয়োজন যে কিছু লোক, যারা রেসকোর্স ময়দানে উপস্থিত ছিলেন, তারা মুজিব জয় পাকিস্তান কথাটি বলেননি বলে দাবি করেন। আমি মনে করি তারা সম্ভবত শ্রবণ সমস্যার জন্য এমনটি বলেন। যারা মঞ্চের কাছে ছিলেন, অথবা মাইক্রোফোন থেকে দূরে ছিলেন তারা সম্ভবত শেষ কথাটি শুনতে পাননি, কেননা তখন হাজার হাজার লোক উত্তেজনাপ্রসূত হলে সেখানে প্রচুর চিৎকার ধ্বনিতে পরিবেশ এমন হয়ে গিয়েছিল যে তারা শেষ শব্দ অর্থাৎ জয় পাকিস্তান কথাটি শুনতে পাননি। এমনকি পাকিস্তান সরকার বা জুলফিকার আলি ভুট্টোও ওই ভাষণের পর মুজিবের বিরুদ্ধে বিচ্ছিন্নতাবাদের অভিযোগ আনেননি।” (পৃষ্ঠা ৪০)। অধ্যাপক ইমতিয়াজ বোঝাতে চেয়েছেন বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতা চাননি।


বিএনপির প্রয়াত নেতা ব্যারিস্টার নাজমুল হুদা এই তত্ত্বের উদ্ভাবক। সাবেক বিচারপতি মুহাম্মদ হাবিবুর রহমানও একথা বলে নিন্দিত হয়েছিলেন। এমন কথা সাবেক এয়ার ভাইস মার্শাল এ কে খন্দকারও তার বইয়ে লিখেছিলেন। এ নিয়ে প্রতিবাদ হলে তিনি অবশেষে তার সে কথা ভুল ছিল বলে স্বীকার করে জাতির কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করেছেন। জানা যায়, জনাব খন্দকার তখন বার্ধক্য অবস্থায় বিএনপি-জামায়াতের এবং অন্যান্য স্বাধীনতাবিরোধী লোকদের দ্বারা প্রভাবিত হয়েই লিখেছিলেন যে, বঙ্গবন্ধু জয় পাকিস্তান বলে তার ভাষণে ইতি টেনেছিলেন। সেদিন লন্ডনে ছাত্র হিসাবে অবস্থানরত হলেও বিবিসি বাংলা বিভাগের সিরাজুর রহমান, কমল বোস, শ্যামল লোধ প্রমুখের সহায়তায় আমাদের কজনার সুযোগ হয়েছিল বুশ হাউজে বিবিসি বাংলা বিভাগের স্টুডিওতে গিয়ে বঙ্গবন্ধুর ভাষণের পুরোটাই শোনার। তাই নিশ্চিত করে বলতে পারি বঙ্গবন্ধু জয় পাকিস্তান শব্দ উচ্চারণ করেননি। এমন বহু লোক যারা সেদিন রেসকোর্সে উপস্থিত ছিলেন, যাদের মধ্যে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র আতিকুল ইসলামের অগ্রজ এবং দেশের প্রাক্তন প্রধান বিচারপতি তাফাজ্জল ইসলাম সাহেবেরও অনুজ, মাইনুল ইসলাম (পরে লেফটেন্যান্ট জেনারেল) উপস্থিত ছিলেন তারাও নিশ্চিত করেছেন যে বঙ্গবন্ধু কখনো জয় পাকিস্তান বলেননি। গত ১৮ মার্চ বাংলা একাডেমিতে গণহত্যা জাদুঘরের অনুষ্ঠিত এক সভাকালে একাডেমির প্রধান কবি মুহম্মদ নূরুল হুদা বলেছেন, তিনিও সেদিন রেসকোর্সে উপস্থিত ছিলেন এবং বঙ্গবন্ধু নিশ্চিতভাবে একথা বলেননি।

সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ুন

প্রতিদিন ৩৫০০+ সংবাদ পড়ুন প্রিয়-তে

আরও