
পাকিস্তানের নাভিশ্বাস: আমরা সতর্ক আছি তো?
পাকিস্তান ধুঁকছে। যারা মনে করেন এটি আনন্দের সংবাদ, আমি তাদের সাথে দ্বিমত পোষণ করি। যে কোনো দেশ মানেই ওই দেশের জনগণ। জনগণ যদি কষ্ট পায় আর ভালো না থাকে তবে শুধু ওই দেশ নয় তার প্রতিবেশী দেশ এমনকি বর্তমানের গ্লোবাল ভিলেজও ভালো থাকে না। কারণ আজকের দুনিয়া পারস্পরিক বিনিময়ের দুনিয়া। একটি দেশ আরেকটি দেশ ব্যতীত বাঁচতে পারে না। পাকিস্তানের অর্থনীতির যে হালচাল তাতে পাশের দেশগুলোও শঙ্কিত। একজন খাঁটি মুক্তিযুদ্ধপ্রেমী ও প্রবাসী বাংলাদেশী হিসেবে আমি মনে করি পাকিস্তানের বোধোদয় এখন সময়ের ব্যাপার। আগেই বলে রাখি এটা কোনো কাটখোট্টা লেখা নয়। এ লেখায় আমি পাকিস্তানের পাশাপাশি নিজেদের কথাও বলতে চাই।
চরম অর্থনৈতিক সংকটের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে পাকিস্তান। দেশটির বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ কমে ৪.৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে নেমে এসেছে। পাকিস্তানভিত্তিক ফ্রন্টিয়ার পোস্ট পত্রিকার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ফেডারেশন অব পাকিস্তান চেম্বারস অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (এফপিসিসিআই) ব্যবসায়ী প্যানেল (বিএমপি) সতর্ক করেছে যে, পাকিস্তানের অর্থনীতি বর্তমানে সবচেয়ে খারাপ সংকটের মুখোমুখি হচ্ছে।
পাকিস্তানে পরিস্থিতি এতটাই খারাপ হয়েছে যে শপিংমল এবং অন্যান্য পাবলিক প্লেস বন্ধ করে দেওয়া হচ্ছে। পাকিস্তানের অর্থনীতি বড় ধরনের সংকটে আটকে আছে, যেখান থেকে উত্তরণের পথ দেখা যাচ্ছে না। পাকিস্তানে আটা, চিনি ও ঘি-এর মতো দৈনন্দিন জিনিসের দাম বেড়েছে। প্রতিদিনই দাম লাফিয়ে বাড়ছে।
পাকিস্তানে অর্থনৈতিক সংকটের প্রভাবে খাদ্যসংকট তৈরি হয়েছে। সম্প্রতি দ্য ডনের প্রতিবেদনে বলা হয়, লাহোরে ১৫ কেজি আটার ব্যাগ বিক্রি হচ্ছে ২ হাজার ৫০ রুপিতে। গত দুই সপ্তাহে ১৫ কেজি আটার বস্তার দাম বেড়েছে ৩০০ রুপি। ইতিহাসে এই প্রথম পাকিস্তানে ২০ কেজি আটার বস্তার দাম হয়েছে ৩ হাজার রুপি। করাচি শহরে ১ কেজি আটার দাম ১৫০ রুপি। গত কয়েক সপ্তাহে সেখানে ২০ কেজির আটার বস্তার দাম বেড়েছে ৪০০ রুপি। হায়দরাবাদে ২০ কেজি আটার বস্তার দাম ২ হাজার ৮৮০ রুপি আর পেশোয়ারে ২ হাজার ৬৫০ রুপি।
গত বৃহস্পতিবার ইতিহাসের সর্বনিম্ন ছিল পাকিস্তানি টাকার দর। সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত রিপোর্ট অনুযায়ী, বৃহস্পতিবার বাজার খোলার পর দিনের শুরুতে পাকিস্তানি টাকার মূল্য ডলারের তুলনায় ছিল ১৯৮.৩৯ টাকা। কিন্তু সময় পেরোতে না পেরোতেই বাজারের পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়। ডলারের তুলনায় রুপির দাম আরও কমে দাঁড়ায় ২০০। অর্থাৎ ২০০ পাকিস্তানি রুপি এক ডলারের সমান। ৭৫ বছরের পাকিস্তানের অর্থনীতিতে এতটা খারাপ সময় আসেনি।
এই অর্থনীতি পাকিস্তানিদের ভুল রাজনীতির কুফল। একটি দেশ যদি বারবার অগণতান্ত্রিক পথে চলে তার ভবিষ্যত এমন হবেই। ২৩ জন প্রধানমন্ত্রী সরকার সামলেছেন কিন্তু একজনও শেষ পর্যন্ত টিকতে পারেননি। মহাবিখ্যাত ক্রিকেটার বিশ্বকাপজয়ী পাকিস্তান দলের কাপ্তান ইমরান খানও পারেননি। যার অর্থ দাঁড়ায়, ওই দেশের রাজনীতি মূলত মানুষ বা জননির্ভর না। বারবার সামরিক বাহিনীর কারণে গণতন্ত্র কখনোই সেখানে জায়গা নিতে পারেনি। আজকে অর্থনৈতিক ধসের জন্য মূলত গণতন্ত্রহীনতাই দায়ী। যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের কাছ থেকে পাকিস্তান যে পরিমাণ সাহায্য সহযোগিতা পেয়েছে তার তুলনা চলে না। পাকিস্তানের দোস্ত চীন ও যুক্তরাষ্ট্র একাত্তরে আমাদের মুক্তিযুদ্ধের বিরোধীতা করেছিল। অস্ত্র ও টাকার স্রোতে ভাসমান পাকিস্তান তখন এবং পরেও বোঝেনি যে এই বসন্ত কাল্পনিক। অন্যের টাকায় বেশিদিন ভালো থাকা যায় না।