বৈধ অর্থে কেন পাচারের দায় থাকবে প্রবাসীদের?
বাংলাদেশ থেকে হাজার হাজার কোটি টাকা বিদেশে পাচার হওয়ার সংবাদের পরিপ্রেক্ষিতে ২০২০ সালে আমরা কানাডায় লুটেরা ও বেগমপাড়াবিরোধী সামাজিক আন্দোলন গড়ে তুলি। এই সংগ্রামকে ঘিরে কিছু প্রশ্ন ও বিতর্ক তৈরি হয়, সেগুলো হচ্ছে-
- সরকার যদি বৈধভাবে বিদেশে অর্থ আনতে বাধা দেয় তাহলে তো তা হুন্ডি ও পাচার হয়েই আসবে। কারণ বৈধভাবে একজন ব্যক্তি দেশ থেকে বছরে ১০ থেকে ১২ হাজার ডলারের বেশি নিতে পারে না।
- যারা বাংলাদেশের বিভিন্ন ব্যাংকের অর্থ আত্মসাৎ করে কানাডার অভিবাসী হয়েছেন তারাই কি শুধু খারাপ? আরও অনেকে যারা অনৈতিক জীবনযাপন করছেন তাদের বিরুদ্ধে কোনো বক্তব্য নেই কেন?
- কেউ কেউ বলেন দেশের ইস্যু বাইরে কেন? সমস্যা তো দেশে, এগুলো নিয়ে এখানকার কমিউনিটিতে বিভেদ-বিতর্ক করার দরকার কী? ইত্যাদি।
কিছু মানুষ এসব আলাপ-বিতর্কে ব্যস্ত! কে ছোট চোর, কে বড় চোর? তাকে বললে, ওকেও কেন বলা হবে না? অনেকে মূল ইস্যু বাদ দিয়ে ওকে, তাকে, যদি, কিন্তু, তাহলে নিয়ে ব্যস্ত হলো!
গ্লোবাল ফাইনান্স ইন্টিলিজেন্স (জিএফআই) একটি মার্কিন গবেষণা প্রতিষ্ঠান। এদের কাজ প্রতিবছর বিভিন্ন দেশে থেকে কি পরিমাণ অর্থ, কোন প্রক্রিয়ায়, কোন কোন দেশে পাচার হয় তার গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ করা। সুইস ব্যাংকের প্রতিবেদন থেকেও আমরা এবং বিশ্ববাসী এসব তথ্য জানতে পারে। ইন্টারন্যাশনাল কনসোর্টিয়াম অব ইনভেস্টিগেটিভ জার্নালিস্টস (আইসিআইজে)-এর পানামা ও প্যারাডাইস পেপারেও বাংলাদেশের অর্থপাচারের তথ্য প্রকাশিত হয়েছে। তারমানে অর্থ পাচারের সংবাদ আমরা দেশ থেকে নয় বিদেশ থেকে জানতে পারি। এমন সময় একশ্রেণির মানুষ এমন অহেতুক বিতর্ক জুড়ে দেয় যে, তাতে বিস্মিত হতে হয়। তবে এ বিতর্ক আপাত নির্বোধ মনে হলেও তা আসলে নিরীহ নয়, উদ্দেশ্যমূলক।
বিতর্ক হয়– কে পাচারকারী আর কে পাচারকারী নয় এই বিষয়ে। যারা তাদের বৈধ অর্থ নানাভাবে বিদেশে নিয়ে আসেন তাদেরকেও কেউ কেউ পাচারকারী বলে অভিহিত করে কূটতর্ক জুড়ে দেন। ওই বিতর্কের জবাব দিতে লুটেরাবিরোধী মঞ্চ, কানাডার পক্ষ থেকে এই আন্দোলনের একটি সংজ্ঞা নির্ধারণ করা হয়। তা হচ্ছে, যারা বা যে সব ব্যক্তির চরিত্র-কর্মকাণ্ড সমষ্টি স্বার্থের প্রাতিষ্ঠানিক ক্ষতি করে, যারা বাংলাদেশের জাতীয় স্বার্থ ও সম্পদের ক্ষতি করে তাদের বিরুদ্ধে আন্দোলন হবে। এখানে পরিষ্কার, যে সব ব্যক্তি ও ব্যক্তিবর্গ পরিকল্পিতভাবে, সূদুরপ্রসারী লক্ষ্য নিয়ে সমষ্টির স্বার্থের ক্ষতি করে, সাধারণ মানুষের ব্যাংকের আমানত আত্মসাৎ করে, নামে-বেনামে অবৈধ সম্পত্তির মালিক হয়, দেশের সম্পদ বিদেশে পাচার করে বিলাসবহুল জীবনযাপন করে তাদের বিরুদ্ধে আমাদের অবস্থান। আরও সুনির্দিষ্ট করে বললে, যাদের বিরুদ্ধে বাংলাদেশ সরকার ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানসমূহের সুনির্দিষ্ট অভিযোগ রয়েছে, মামলা আছে, যাদের সাজা হয়েছে, আত্মগোপনকারী পলাতক আসামী তাদের বিরুদ্ধে এ আন্দোলন। এখানে প্রচলিত কোনো রাজনৈতিক সমীকরণ ও পক্ষ-বিপক্ষ নেই।
- ট্যাগ:
- মতামত
- বিদেশে অর্থ পাচার