ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞান পাঠ্যবইয়ের তথ্য শিক্ষার্থীদের সংকটে ফেলবে

ডেইলি স্টার মুতাসিম বিল্লাহ প্রকাশিত: ২৩ জানুয়ারি ২০২৩, ২২:৫৭

গত কয়েকদিন যাবৎ অনেক আলোচনা-সমালোচনার কারণে নানা ব‌্যস্ততার মাঝেও ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের পাঠ্যবই ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞান বই পড়ার সুযোগ করে নিলাম। আমার স্ত্রীও যেহেতু এই বিষয়ের শিক্ষক, তাই তার সঙ্গে আলাপ ও এ বিষয়ে কী ধরনের প্রশিক্ষণ হয়েছে তাও জানার সুযোগ হলো এ কয়দিনে।


ষষ্ঠ শ্রেণির অনুশীলনী বইয়ের কয়েকপাতা উল্টানোর পরে ১৬ থেকে ২২ পৃষ্ঠায় ভালুকের গল্প শুনিয়ে ইতিহাস শিক্ষা দেওয়া বেশ বেখাপ্পা মনে হলো। কিছু দুর্বোধ্য ও বিদেশি শব্দ, যেগুলোর সাবলীল বাংলা করা সম্ভব, সেসব বিষয়েরও ইংরেজি শব্দ, বাংলা দুর্বোধ্য শব্দ ষষ্ঠ শ্রেণির শিক্ষার্থীদের জন্য বেশ কঠিন হবে বলে মনে হলো।


শিক্ষার্থীদের নাম হিসেবে যেসব শব্দ নিয়ে আসা হয়েছে, তাতেও এক ধরনের গা ছাড়া ভাব পরিলক্ষিত হয়। 'ফ্রান্সিস' কিংবা 'অনুসন্ধান' দেশের কোনো শিক্ষার্থীর নাম হিসেবে এ বয়সের শিক্ষার্থীরা পরিচিত নয়। আমরাও নই। কিছুদূর গিয়ে মনে হয়েছে, শিক্ষার্থীদের জোর করে হলেও গবেষণা শেখানোর প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে। যেখানে বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেক শিক্ষার্থীই গবেষণার সঙ্গে পরিচিত কিংবা গভীরভাবে সম্পর্কিত নন, এমনকি স্কুল কলেজের শিক্ষকদের নিয়োগের ক্ষেত্রেও গবেষণা প্রবন্ধ বাধ্যতামূলক নয়, সেখানে হঠাৎ করে স্কুলের শিক্ষার্থীদের কায়দা করে এমন গবেষণায় সংযুক্ত করার ব্যাকুল বাসনা হলেও তা বাস্তবরূপ লাভ করবে কি না, তা বিতর্কের ঊর্ধ্বে নয়।


প্রতিটি অধ্যায়ে খুশি আপাকে দিয়ে জোর করে গল্প বানিয়ে সেটাকে শিক্ষার্থীদের খাওয়ানোর প্রচেষ্টা বইটিতে লক্ষণীয়। এই পাঠ‌্যবইয়ে সমাজ বিজ্ঞানের সঙ্গে ইতিহাসের সম্পর্ক অনেকটাই খাপছাড়া। আবার ইতিহাসের গল্পকে এমনভাবে বর্ণনা করা হয়েছে, যা শিক্ষার্থীদের দীর্ঘসময় স্মরণে রাখা অসম্ভব হবে।


প্রাগ-ইতিহাস পরবর্তী আদি ঐতিহাসিক এর ঐতিহাসিক ঘটনা, প্রত্নস্থান, ষোড়শ মহাজনপদ, মৌর্য, শুঙ্গ, কুষাণ, গুপ্ত, পাল, সেন, সুলতানি, মোগল, ব্রিটিশ, পাকিস্তান, বাংলাদেশ— এই যে ইতিহাসের কালানুক্রম, সেটাকে ঘোরাতে-পেছাতে গিয়ে এত বেশি জটিল করা হয়েছে যে, কোর্স শিক্ষকই হিমশিম খাবেন।


একটি অধ্যায়ের সঙ্গে আরেকটি অধ্যায়ের সংযুক্তিতে কোনো ধারাবাহিকতা রক্ষা করা হয়নি, যা শিক্ষার্থী ও শিক্ষক— উভয়ের জন‌্যই বোঝা হবে। প্রায় প্রতিটি অধ্যায়ে দলগতভাবে কাজ দেওয়া হয়েছে, সেক্ষেত্রে যেসব শিক্ষার্থী দুর্বল, তাদেরকে শনাক্ত করে নিবিড় সহযোগিতা করা শিক্ষকের জন‌্য কঠিন হবে। এই পাঠ‌্য পড়াতে গেলে নানা উপায়ে উপস্থাপনার যে পরামর্শ দেওয়া হয়েছে, বাংলাদেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সে ধরনের উপকরণ, পরিবেশ, সুযোগ এখনো তৈরি হয়নি। যে কারণে দেখা যাবে অধিকাংশ অধ্যায়ের বাস্তবায়নের বদলে তা শুধু মুখে আওড়ানোর মধ‌্যেই সীমাবদ্ধ থাকবে।


বেশ কিছু অধ‌্যায়ে অভিভাবক, প্রতিবেশী এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিদের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের কাজ দেওয়া হয়েছে। বাংলাদেশের চিরায়ত বাস্তবতায় এখনো কিশোররা এ ধরনের কাজ বাস্তবায়ন করতে সক্ষম হবে না। সেই সঙ্গে অভিভাবকরাও সে ধরনের মানসিক, শিক্ষাগত কিংবা সাংস্কৃতিক দিক বিবেচনায় শিক্ষার্থীদের সহযোগিতা করবে না। যেমন: সক্রিয় নাগরিক ক্লাব, বইপড়া ক্লাব, বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ ক্লাব— এগুলো পড়তে বেশ চটকদার, মজার, গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে হলেও এ বিষয়ে যে বাস্তবিক কাজ দেওয়া হয়েছে, শিক্ষার্থীরা সময়, পরিবেশ ও বাস্তবতার নিরিখে অধিকাংশই যে তা বাস্তবায়ন করতে পারবে না। একাধিক স্কুলশিক্ষকের সঙ্গে কথা বলেও তা নিশ্চিত হয়েছি।

সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ুন

প্রতিদিন ৩৫০০+ সংবাদ পড়ুন প্রিয়-তে

আরও