শীতার্ত বাংলাদেশ: মানুষ মানুষের জন্য!
যারা মনে করেন কলাম বা চলমান লেখালেখি মানে রাজনীতি বা দলীয় চর্চা আমি তাদের দলে পড়ি না। আবার এটাও মানি না যে, কলাম মানেই নিরন্তর সমালোচনা বা নিন্দা করা। এটা স্বীকার করি সবাই মিলেই এমন এক আবহ তৈরী করে ফেলেছি আমরা। আমার মনে হয় মানুষ তেমন লেখাগুলো পড়েন এবং পড়তে ভালোবাসেন যা তাদের মন স্পর্শ করতে পারে।
যখন এ লেখা লিখছি বাংলাদেশে তখন জাঁকিয়ে শীত পড়ছে। টিভিতে শীতে কাবু মানুষের দুরবস্থা দেখলাম। উত্তরবঙ্গ বা দক্ষিণবঙ্গের শীত প্রায় ফি বছরই শিরোনাম হয়ে যায়। এ বছর শীত খোদ ঢাকাকেও ছাড় দিচ্ছে না দেখতে পাচ্ছি। রাজধানী শহরের ধনী বা মধ্যবিত্তরা শীতের সকাল-রাতে কফির কাপ কিংবা ধোঁয়া ওঠা বারবিকিউ-এর ফটো দিয়ে নিজেদের দুঃখবিলাসের কথা জানাচ্ছেন। মন্দ কী? তা তারা করতেই পারেন। কিন্তু মন খারাপ হলো রাজপথে শীতার্ত মানুষগুলোকে দেখে। এমন কত হাজার বা লক্ষ মানুষ আছেন কে জানে? সংখ্যা নিয়ে যারা বাহাস করতে ভালোবাসেন তারা হয়তো এখনই ঝগড়া শুরু করে দেবেন। হাতে-কলমে পরিসংখ্যান দিয়ে প্রমাণ করে ছাড়বেন আগের আমলগুলোর চাইতে ফুটপাত বা রাজপথের কিনারায় রাত কাটানো মানুষের সংখ্যা কমে গেছে। নিশ্চয়ই কমেছে।
এ জন্য সরকার ও সংশ্লিষ্টদের ধন্যবাদ। কিন্তু কমতে কমতেও থেকে গেছে অনেক মানুষ। যাদের রাতে কোথাও যাবার জায়গা নাই। টিভিতে এটাও দেখলাম, গাড়ি করে এসে যারা শীতবস্ত্র দিচ্ছেন তাদের ঘিরে আছে বেশ কিছু মানুষ। চেহারা দেখলেই বোঝা যায় তারা কতটা কাবু। আপনি একবার ভাবেন এমন শৈত্যপ্রবাহ আর ঠান্ডায় আপনি-আমি যেখানে ঘরে থাকতে পারছি না তখন এই মানুষগুলো খোলা রাস্তায় কনকনে শীতের হাওয়ায় কীভাবে রাত কাটান?
এখন সোশ্যাল মিডিয়ার যুগ। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে মানুষ পোস্ট দেয় না এমন কোনো বিষয় নেই বললেই চলে। এসব পোস্টে কাজও হয়। এটা তো প্রমাণিত সত্য যে, খবরের কাগজ এমনকি বহু চলমান, দৃশ্যমান মিডিয়ার চাইতেও শক্তিশালি ফেইসবুক, ইনস্টাগ্রাম বা টুইটার। দেশের ভেতর সংঘটিত কত অন্যায়-অপমান আর বেদনার প্রতিকার করে ছেড়েছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম। বিশেষত ধর্মের নামে সাম্প্রদায়িকতা বা বিজ্ঞানহীনতার বিরুদ্ধে ফুঁসে ওঠা জনমত অনেক পরিবর্তন সম্ভব করে ছেড়েছে। অথচ এমন একটা মানবিক বিষয় নিয়ে কেন নীরব থাকবে বা থাকি আমরা?