রাষ্ট্র মেরামত কতটা সহজ
সাম্প্রতিক সমাবেশগুলোতে বিএনপি রাষ্ট্র মেরামতের কথা বলেছে। স্মরণ করা যেতে পারে, ২০১৮ সালে নিরাপদ সড়কের দাবিতে সারা দেশের স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরাও রাস্তায় নেমেছিলেন রাষ্ট্র মেরামতের দাবিতে। তাদের হাতে তখন প্ল্যাকার্ড ছিল, 'রাষ্ট্রের মেরামত চলছে, সাময়িক অসুবিধার জন্য আমরা দুঃখিত।'
কিন্তু বাস্তবতা হলো, তারা রাষ্ট্র মেরামত করতে পারেননি বা তাদের ওই আন্দোলনের ফলে রাষ্ট্র মেরামত হয়নি। তার প্রমাণ এখনও সড়ক নিরাপদ হয়নি। সড়ক নিরাপত্তার জন্য একটি আইন হয়েছে—যেটির অনেক দুর্বলতা রয়েছে এবং সেই দুর্বল আইনটিও পুরোপুরি প্রয়োগ হয় না বা প্রয়োগ করা যায় না পরিবহন খাতের প্রভাবশালী মালিক-শ্রমিক সংগঠন এবং রাজনৈতিক প্রভাবের কারণে।
তার মানে সড়ক নিরাপদ করার মতো একটি কাজও যেখানে কঠিন, সেখানে রাষ্ট্রের মেরামত যে কত বড় চ্যালেঞ্জ—সেটি বলাই বাহুল্য।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের 'বাকশাল'কে বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পরে প্রথম রাষ্ট্র সংস্কারের ধারণা বলে অভিহিত করা যায়। কারণ বাংলাদেশ আওয়ামী লীগসহ অন্যান্য সব দলের কার্যক্রম নিষিদ্ধ করে অর্থনৈতিক সংস্কারের জন্য তিনি যে বাংলাদেশ কৃষক শ্রমিক আওয়ামী লীগ (বাকশাল) গঠন করেছিলেন, সেটিকে তিনি বলেছিলেন 'দ্বিতীয় বিপ্লব'। মুক্তিযুদ্ধ ছিল প্রথম বিপ্লব।
সেই মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ গঠনের ৩ বছরের মাথায় অর্থনৈতিক সংস্কারের জন্য বঙ্গবন্ধু যে কর্মসূচি গ্রহণ করেন, সেটি ছিল তার ভাষায় 'দ্বিতীয় বিপ্লব'। অর্থাৎ যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ গঠনের কাজটি যে সঠিক পথে চলছে না; দুর্নীতি দুর্বৃত্তায়ন ও ষড়যন্ত্র যে পুরো রাষ্ট্রযন্ত্রকে আষ্টেপৃষ্ঠে বেঁধে ফেলেছে—সেই নির্মম বাস্তবতাটি স্বয়ং বঙ্গবন্ধু উপলব্ধি করতে পারছিলেন। তিনি দেখছিলেন, তার আশেপাশেই চোরের দল। তিনি যে দুঃখী মানুষের মুখে হাসি ফোটানোর রাজনীতি করতেন; গণতান্ত্রিক উপায়ে সমাজতন্ত্রে উত্তরণের যে ভিশন তার ছিল, সেটি যে বাস্তবায়ন করা যাচ্ছে না, তা তিনি বুঝতে পারছিলেন বলেই 'ঘুনে ধরা সমাজকে' 'চরম আঘাত' করতে চেয়েছিলেন। বড় ধরনের সংস্কার করতে চেয়েছিলেন।
- ট্যাগ:
- মতামত
- সংস্কার
- রাষ্ট্র ব্যবস্থা