মাঠ-ময়দানের রাজনীতির বিকল্প কী

কালের কণ্ঠ গাজীউল হাসান খান প্রকাশিত: ১৫ ডিসেম্বর ২০২২, ১৩:০০

আধুনিক নগরায়ণ মানুষের জীবনে শুধু আর্থ-সামাজিক পরিবর্তনই নয়, বদলে দিতে পারে দীর্ঘদিনের রাজনৈতিক সংস্কৃতিও। বাংলাদেশের স্বাধীনতাপূর্ব গণ-আন্দোলন, গণজমায়েত কিংবা জনসভার যে স্বরূপ বা বৈশিষ্ট্য ছিল, তা এখন ক্রমে ভিন্নরূপ নিতে শুরু করেছে। স্বাধীনতা-উত্তর রাজধানী ঢাকার কথাই যদি ধরা যায়, তাহলে বলতে হবে বিশাল বিশাল জনসভা আয়োজন করার মতো উপযুক্ত স্থান এখন আর নেই বললেই চলে। তৎকালীন প্রাদেশিক রাজধানী ঢাকার সেই ঐতিহাসিক উন্মুক্ত পল্টন ময়দান কিংবা বিশাল সোহরাওয়ার্দী উদ্যান (সাবেক রমনা মাঠ) এখন আর আগের মতো নেই।


পল্টনে (ময়দান) সভা-সমিতি বন্ধ হয়েছে বহু আগে থেকেই। সেখানে গড়ে তোলা হয়েছে ভাসানী হকি স্টেডিয়াম। আশির দশকের গোড়া থেকেই তার কাজ হাতে নেওয়া হয়েছিল। শুধু তা-ই নয়, রমনা এলাকায় এখন যেখানে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান গড়ে তোলা হয়েছে, সেটি ছিল একটি উন্মুক্ত ময়দান। সেই মাঠ একাত্তরের ৭ মার্চে বঙ্গবন্ধুর প্রদত্ত ভাষণ এবং ওই বছরেরই ১৬ ডিসেম্বর পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর আত্মসমর্পণের জন্য ঐতিহাসিক তাৎপর্য লাভ করেছিল। সরকারের বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কার্যক্রম হাতে নেওয়ার কারণে সেই মাঠ এখন বিশাল কোনো জনসভা আয়োজনের জন্য অনেকটাই সংকুচিত ও অবরুদ্ধ হয়ে পড়েছে। আগের মতো আর উন্মুক্ত অবস্থায় নেই। সুতরাং বর্তমান রাজধানী ঢাকায় লাখ লাখ জনতার স্থান সংকুলান হয় তেমন খোলা মাঠ কিংবা ময়দান এখন কোথাও খুঁজে পাওয়া যাবে না। মুক্তিযুদ্ধ-পূর্ববর্তী অর্থাৎ একাত্তরের ২৫ মার্চের আগে ঢাকায় দুটি ঐতিহাসিক জনসভা অনুষ্ঠিত হয়েছিল। এর একটি অনুষ্ঠিত হয়েছিল একাত্তরের ৭ মার্চ এখনকার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে এবং অন্যটি ৯ মার্চ পল্টন ময়দানে, যার প্রধান আকর্ষণ ও বক্তা ছিলেন মওলানা ভাসানী।


একাত্তরের ৭ মার্চ সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে প্রদত্ত বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভাষণ ছিল আমাদের স্বাধীনতাযুদ্ধের প্রেক্ষাপট ও রূপরেখা তুলে ধরার একটি অবিস্মরণীয় ঐতিহাসিক ক্ষণ। সেই জনসমুদ্রে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে আগত ২০ লাখেরও বেশি সংগ্রামী মানুষ যোগ দিয়েছিল, যার রেকর্ড আজও অক্ষুণ্ন রয়েছে। পল্টন ময়দানে মজলুম জননেতা মওলানা ভাসানীর জনসভা ছিল ৯ মার্চ। সেই ঐতিহাসিক জনসভায় মওলানা ভাসানী বঙ্গবন্ধুর কর্মসূচির প্রতি তাঁর পূর্ণ সমর্থন জানিয়ে পাকিস্তানি স্বৈরশাসকদের বিরুদ্ধে অসহযোগ আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার আহ্বান জানিয়েছিলেন। সেই সভা থেকে মওলানা ভাসানী একাত্তরের ২৫ মার্চের মধ্যে বঙ্গবন্ধু ঘোষিত দাবিগুলো মেনে নেওয়ার আহ্বান জানান। নতুবা ২৫ মার্চের পর থেকে তিনি বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে হাত মিলিয়ে চলমান আন্দোলনকে তার কাঙ্ক্ষিত গন্তব্যে নিয়ে যাওয়ার হুঁশিয়ারি দেন। বাংলাদেশের তৎকালীন সব গণ-আন্দোলন কিংবা সংগ্রামের সূতিকাগার ছিল বিশেষ করে পল্টন ময়দান ও তৎকালীন রমনা মাঠ। স্বাধীনতা অর্জনের বেশ কয়েক বছর পরও উল্লেখিত এই দুটি প্রায় উন্মুক্ত ময়দান সভাস্থল হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছে।


স্বাধীনতা অর্জনের পর ১৭ মার্চ ১৯৭২ সালে প্রথমবারের মতো ঢাকায় এলে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে তাঁর সম্মানে নির্মিত ‘ইন্দিরা মঞ্চ’ থেকে বাংলাদেশের জনগণের উদ্দেশে ভাষণ দেন তৎকালীন ভারতের প্রধানমন্ত্রী শ্রীমতী ইন্দিরা গান্ধী। আজ সেই সোহরাওয়ার্দী উদ্যান আগের মতো আর নেই। নেই সেই পল্টন ময়দান, যা আমাদের রাজনৈতিক ইতিহাসের অনেক ঘটনার সাক্ষী, গণ-আন্দোলনের সূতিকাগার। বিশ্বব্যাপী জনসংখ্যা বৃদ্ধি এবং পর্যায়ক্রমিক নগরায়ণের ফলে শহর-নগরের ফাঁকা মাঠগুলো এখন অতি দ্রুতই হারিয়ে যাচ্ছে। সেখানে গড়ে উঠছে শহর-নগরমুখী মানুষের জন্য আবাসন কিংবা কর্মসংস্থানের জন্য শিল্পায়ন, তা ছাড়া অফিস-আদালত। কিন্তু আমাদের এবং এমনকি বৃহত্তরভাবে উপমহাদেশের রাজনৈতিক সংস্কৃতি থেকে জনসভা কিংবা জনসমাবেশের প্রভাব এখনো কাটেনি। সে কারণেই প্রয়োজনীয় মাঠ-ময়দানের অভাবে বিরোধী দলগুলো কিংবা সংগ্রামী মানুষ বেছে নিতে বাধ্য হয় শহর-নগরের বিভিন্ন মহাসড়ক কিংবা বড় রাস্তার সংযোগস্থলগুলো।

সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ুন

প্রতিদিন ৩৫০০+ সংবাদ পড়ুন প্রিয়-তে

আরও