নানা অসংগতির রাজনীতি
আমাদের দেশে ক্ষমতাসীন ও ক্ষমতাপ্রত্যাশী দুই প্রধান দলের মান্যবর নেতা-নেত্রীরা বছর-জুড়েই বাদানুবাদের মধ্য দিয়ে পরস্পরকে ঘায়েল করতে ব্যস্ত থাকেন। তারা হয়তো মনে করেন, এতে দলীয় কর্মী-সমর্থকরা চাঙা থাকবে। যুক্তি শক্ত থাকলে সে দলের দিকে সাধারণ মানুষ ঝুঁকবে। মাঝেমধ্যে মনে হয়, পৃথিবীর মধ্যে আমাদের দেশের রাজনীতিবিদরা সবচেয়ে বেশি জ্ঞানী। সর্ববিষয়ে তাদের জ্ঞান অত্যন্ত সুতীক্ষ্ণ। তাই বুদ্ধির চর্চা করা পেশাজীবীদেরও সুযোগ পেলেই তুড়ি মেরে উড়িয়ে দেন। এতে ক্ষমতাবান নেতা-নেত্রীদের দোষ দেওয়া যায় না। একশ্রেণির বুদ্ধিজীবী নামধারী আছেন, যারা নানা প্রাপ্তিযোগের অভিপ্রায়ে এসব নেতা-নেত্রীর সামনে নিজেদের মর্যাদা বিকিয়ে দেন। সে যাই হোক, আমরা শ্রেণিভেদে থাকতে চাই না। চাই নির্বাচনের গা গরম করা আবহাওয়ায় নেতা-নেত্রীদের নানা বচন ও আচরণের তাৎপর্য খুঁজতে।
উদাহরণ দেওয়ার মতো অনেক তথ্য আছে। এর মধ্যে দু-একটি উদ্ধৃত করছি। সাধারণ মানুষের মুশকিল হচ্ছে টেলিভিশন পর্দার সামনে বসা মানুষ নেতাদের বলা অনেক কথার বিপরীতে প্রশ্ন করতে চায়। কিন্তু কে শুনবেন বা কে উত্তর দেবেন। সবাই যেন তাদের বক্তব্যগুলো সাধারণ মানুষের ঘাড়ে চাপিয়ে দেন। প্রশ্ন শুনতে চান না। তাই উত্তর দেওয়ার তো প্রশ্নই আসে না।
এই যেমন বরিশালে বিএনপির জনসভা সামনে রেখে বিএনপি এবং সাধারণ মানুষের ভাষায় সরকারই সব ধরনের পরিবহণ বন্ধ করে দিয়েছে। এমন আচরণে বিএনপি মহাসচিব অবাক হয়েছেন। তার বক্তব্যের সারকথা-এমন অসাধুতা তিনি দেখেননি। তার বক্তব্য শুনে আমরা আবার অবাক হয়েছি। বিএনপি আমলে বিরোধী দলে থাকা আওয়ামী লীগের জনসভার লোকসমাগম ঠেকানোর জন্য একই কাণ্ড তো তারাও করেছিলেন। স্মৃতিভ্রষ্টতার রোগে না ভুগলে বিএনপি নেতার অবাক হওয়ার কারণ আমাদের কাছে স্পষ্ট নয়। বরং বিস্মিত হতে হয়েছে ক্ষমতাসীনদের ভূমিকা দেখে। বিএনপি আমলের সরকারি অবরোধে কি আওয়ামী লীগের জনসভা পণ্ড হয়েছিল না জনসভায় লোকসমাগম কম হয়েছিল? তা হলে একের পর এক জনসভার সময় অবরোধ তৈরি করে অর্জনের চেয়ে অনেক বেশি বিসর্জন দিয়ে যাচ্ছেন কেন? কেবল মনের জোর কমে গেলে এমনটি হতে পারে! এসব কাণ্ডে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে সাধারণ মানুষ; ক্ষোভ প্রকাশ করছেন টেলিভিশন ক্যামেরার সামনে। পরিবহণ না থাকায় নানাভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে সাধারণ মানুষ। অ্যাম্বুলেন্স না পেয়ে রোগীর আত্মীয়রা বুক চাপড়াচ্ছে। আমার এক ছাত্রী বাড়ি বরিশালে-এখন সরকারি কলেজের শিক্ষক; আওয়ামী লীগের হয়ে কাজও করেছে গত নির্বাচনে। এখন তার দলের দুর্দশায় কষ্ট পাচ্ছে। তার পরিচিত একজনের মেয়ের বিয়েতে বরযাত্রী আসতে পারছে না। ভয়ানক অস্বস্তিতে আছেন তারা। সরকার সমালোচিত হচ্ছে। যদি নির্বাচন নিয়মমাফিক হয় এবং জনগণের ভোট দেওয়ার সুযোগ থাকে, তাহলে ক্ষুব্ধ ভোটার কী আচরণ করে তা বলা মুশকিল।