সাহস করে সত্য কথা বলতে হবে
সৈয়দ আবুল মকসুদ ছিলেন আমাদের সময়ের একজন পরিশ্রমী ও মননশীল লেখক-গবেষক। তাঁর সঙ্গে পরিচয় ভোরের কাগজ ও প্রথম আলোর পাতায়। প্রথম আলোয় তিনি দুটি কলাম লিখতেন। একটির শিরোনাম ‘সহজিয়া কড়চা’, অন্যটি ‘বাঘা তেঁতুল’। তাঁর লেখায় তথ্য, উপাত্ত, হাস্যরস, শ্লেষ, সুপারিশ—সবই থাকত। ‘বাঘা তেঁতুল’ পরে অনিয়মিত হয়ে গিয়েছিল। যা হোক, প্রতি মঙ্গলবার প্রথম আলোয় মকসুদ ভাইয়ের কলামের জন্য অপেক্ষা করতাম। তিনি চলে গেলেন অপ্রত্যাশিতভাবে। সংবাদটি শোনার পর থ হয়ে গিয়েছিলাম। এক ঘণ্টা আগেও বুঝতে পারিনি যে, আর তাঁকে দেখব না, আর কথা হবে না তাঁর সাথে।
মকসুদ ভাইয়ের সাথে আমার সামনাসামনি পরিচয় প্রথম আলো অফিসে। যে সাদা পোশাকে তিনি চলাফেরা করতেন, তার বাইরে অন্য কোনো পোশাকে তাঁকে দেখেছি বলে মনে পড়ে না। আমরা অনেকেই ঠাট্টা করে বলতাম, মকসুদ ভাই কাফনের কাপড় পড়ে তৈরি হয়েই আছেন। ডাক এলেই চলে যাবেন। কিন্তু এত শিগগির তাঁকে যেতে হবে, ভাবিনি।
মকসুদ ভাইয়ের সঙ্গে অনেক স্মৃতি। তিনি মূলত গবেষক। অনেক আগেই কাজ করেছেন মওলানা ভাসানীকে নিয়ে। ভাসানীর প্রতি তাঁর দুর্বলতা ছিল। মনে আছে, আমার ‘বেলা অবেলা’ বইটির পাণ্ডুলিপি যখন তৈরি করছি, কখন তাঁর কাছে জানতে চেয়েছিলাম, ১৫ আগস্ট হত্যাকাণ্ডের পর মওলানা সামরিক সরকারের পক্ষে বিবৃতি দিলেন কেন? ১৭ আগস্ট সেই বিবৃতি ইত্তেফাকের পাতায় সবাই পড়েছে। মকসুদ ভাই আমার ভুল ধরিয়ে দেন। বলেন যে, এ বিবৃতিটি জাল। সরকারের নির্দেশে পিআইডি এই বিবৃতি বাসসকে সরবরাহ করেছিল। সামরিক জান্তার ধারণা হয়েছিল, মওলানা ভাসানীর সমর্থন আছে এমন একটি বিবৃতি প্রচার করতে পারলে তারা জনগণের সমর্থন পাবেন। মকসুদ ভাইয়ের প্রশ্ন, ‘মওলানা তখন অসুস্থ। সন্তোষ থেকে তিনি টেলিগ্রাম পাঠালেন আর সেটা প্রচার করা হলো—এটা অবিশ্বাস্য। টেলিগ্রামের কপি কই? সন্তোষের কোন টেলিগ্রাম অফিস থেকে ঢাকার কোন ঠিকানায় এটা পাঠানো হয়েছিল? আমি তো তখন বাসসে কাজ করি। আমি জানি, এটা মিলিটারির পক্ষ থেকে পিআইডি বাসসকে দিয়েছিল।’ মকসুদ ভাইয়ের দেওয়া এই তথ্যটি আমি আমার পাণ্ডুলিপিতে সংযোজন করেছিলাম।
- ট্যাগ:
- মতামত
- স্মৃতিচারণা
- সৈয়দ আবুল মকসুদ