সিরাজুল ইসলাম চৌধুরীর ব্যবস্থাপত্রে শিক্ষক মুক্তি

দেশ রূপান্তর ড. এম এ মোমেন প্রকাশিত: ১৯ অক্টোবর ২০২২, ১২:৪৫

২০ জুন ২০২২ দেশ রূপান্তর পত্রিকায় অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী প্রাণহীন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে প্রাণের সঞ্চার করতে সবিনয়ে অনুরোধ করেছেন ‘রাজনীতিকরা কি শিক্ষকদের অব্যাহতি দেবেন!’ রাজনীতিবিদরা শিক্ষককে সম্মান যেমন করেছেন অসম্মানও তার চেয়ে কম করেননি, শিক্ষকরা নিজেদের অসম্মান করেছেন আরও বেশি। তার লেখা থেকে উদ্ধৃত : ‘আমাদের বড় দুই রাজনৈতিক দল সব পেশাতেই দলীয় বিভাজন নিয়ে এসেছেন, শিক্ষকতার পেশাকে যদি তারা অব্যাহতি দেন তবে জাতি তাদের কাছে কৃতজ্ঞ থাকবে।’


অধ্যাপক চৌধুরী প্রকৃতপক্ষে তিনটি মৌলিক পদক্ষেপ গ্রহণ করার কথা বলেছেন : শিক্ষাকে দল-বাণিজ্যের গ্রাস থেকে মুক্ত করা। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে প্রাণবন্ত ও আকর্ষণীয় করা। শিক্ষার মূলধারাকে বেগবান ও শক্তিশালী করা। প্রত্যেকটি বিষয়ই গুরুত্বপূর্ণ এবং বাস্তবায়নের কৌশলগত প্রক্রিয়া নিয়ে বিস্তারিত আলোচনার সুযোগ রয়েছে। আমি কেবল প্রথম প্রতিপাদ্য শিক্ষাকে দল ও বাণিজ্যের গ্রাস থেকে মুক্ত করার অর্ধাংশ অর্থাৎ ‘দল’-এ আমার আলোচনা সীমিত রাখব। শিক্ষাকে দল এবং দলীয় নেতৃত্বের আছরমুক্ত করতে তিনি শুভ ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন যেন রাজনীতিকরা শিক্ষকদের অব্যাহতি দেন। এটাকে তাত্ত্বিকভাবে বলা যায়, পলিটিসাইজেশন থেকে শিক্ষকদের (এবং শিক্ষাকেও, সে আলোচনা না হয় বাদই যাক) অব্যাহতি দিতে হবে। আমি আমার মাঠভিত্তিক কর্মজীবনের বাস্তব অভিজ্ঞতা ও পর্যবেক্ষণ থেকে স্পষ্টভাবে বলতে চাই রাজনীতিবিদরা শিক্ষকদের পলিটিসাইজ করেন না। শিক্ষকরা ‘পলিটিসাইজড’ হতে রাজনীতিবিদদের কাছে বিশেষ করে ক্ষমতাসীনদের দরজায় অবিরাম করা নাড়তে থাকেন। শুধু শিক্ষকতা কেন, অন্য পেশার বেলায়ও তাই। কড়া নাড়া শুনেই তারা দরজা খোলেন না, বুজে-শুনে দর-কষাকষি করে অতঃপর দরজা খুলে থাকেন। রাজনীতিকীকরণের দায় কি রাজনীতিবিদদের নয়? একসময় এই প্রশ্নের উত্তরে আমি অবশ্যই জোর দিয়ে হ্যাঁ বলতাম, কিন্তু আমার অভিজ্ঞতা ও পর্যবেক্ষণ আমাকে সে অবস্থান থেকে সরিয়ে এনেছে।


পূর্ব পাকিস্তানের গভর্নর মোনায়েম খানের জমানায় ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ে এনএসএফ তৈরি হয়েছিল, এনএসএফ লালন করার মতো কজন শিক্ষকও নিজেদের প্রস্তুত এবং যোগ্য করে তুলেছিলেন। মোনায়েম খান উদাত্ত আহ্বান জানিয়ে দলে দলে বিশ^বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের তার ও তার দলের ছায়াতলে আশ্রয় নিতে বলেননি। তবুও দেখা গেল অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরীর বয়োজ্যেষ্ঠ একজন শিক্ষক ময়মনসিংহ সার্কিট হাউজে গিয়ে গভর্নরকে কদমবুসি করলেন। জেলা ম্যাজিস্ট্রেটসহ যারা সামনে ছিলেন তারা বিব্রতবোধ করলেন। এই কাহিনী একটি ইংরেজি গ্রন্থে এবং একটি ইংরেজি পত্রিকায় পড়েছি। সেই শিক্ষকের এই কদমবুসির অর্থ কোনো রাজনৈতিক আনুগত্যের প্রকাশ নয় বরং আপনি গভর্নর, আপনি মা-বাপ, আপনি চাইলেই তো আমাকে বদলি করে আপনার জেলায় নিয়ে আসতে পারেন। বিনিময়ে যদি আপনার কিছু হুকুম-আহকাম শুনতে হয়, না হয় শুনলাম। এ রকম কদমবুসি করা শিক্ষকের অভাব হয়নি সেকালেও। তাদের চাওয়াটা মূলত অরাজনৈতিক, পরিমাণেও সামান্য। আমি জাতীয় পার্টি আমল, বিএনপি আমল এবং আওয়ামী লীগ আমল এবং মাঝে দু-তিনবার তত্ত্বাবধায়ক আমলে সরকারি চাকরি করেছি এবং কাছে থেকেই মাঠের শিক্ষাব্যবস্থা দেখেছি, আমার সীমিত দায়িত্বে যতটা সম্ভব ভূমিকা রাখতেও চেষ্টা করেছি। কয়েকটি ছোট অভিজ্ঞতার কথা জানাতে চাই।


উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষা কেমন হচ্ছে দায়িত্বপ্রাপ্ত হয়েই দেখতে গিয়েছি। কলেজের প্রিন্সিপাল তার একটা বিজনেস কার্ড এগিয়ে দিলেন। তাতে বিএ (অনার্স), এমএর পর মুদ্রিত হয়েছে পিএইচডি (অ্যাডমিটেড)। স্বভাবতই কার্ডটা হাতে নিয়ে জিজ্ঞেস করলাম কোন সুনির্দিষ্ট বিষয়ে পিএইচডি করছেন? তিনি বললেন, এত তাড়াহুড়ো কীসের? বিষয় এখনো ঠিক করিনি। দেখি কিছু একটা নিয়ে করব। কিছু একটা নিয়ে পিএইচডি করবেন। ঠিক করেননি কিন্তু অ্যাডমিশন হয়ে গেছে এ কথা বিজনেস কার্ডে লিখেছেন। পরীক্ষায় নকল চলছে দেদার। দুজনকে বাড়াবাড়ি রকমের নকলে লিপ্ত দেখে এক্সপেল করাতে প্রিন্সিপাল ক্ষিপ্ত হলেন এবং বিড় বিড় করে বললেন, এর পরিণতি কি জানেন? দুজনের জন্য আমরা আগামী বছর দুশ ছাত্রছাত্রী পাওয়া থেকে বঞ্চিত হব। তিনি বলেই চললেন, পরীক্ষা দেওয়ার সুবিধাই যদি না পায় তাহলে এই কলেজে ভর্তি হবে কেন? এটা জানলে আমাদের এমপি সাহেব খুব অসন্তুষ্ট হবেন। অপর একটি কক্ষে পরীক্ষার্থীদের কাউকে এক্সপেল না করে বরং দায়িত্বপ্রাপ্ত একজন শিক্ষককে প্রত্যাহার করার কথা বলেছি। এবার প্রিন্সিপাল সাহেব বিড় বিড় করে না বলে সশব্দেই বললেন। এজন্যই কি আমরা একাত্তরে বুকের রক্ত দিয়ে দেশ স্বাধীন করেছি? খুবই কঠিন প্রশ্ন। বুকের রক্ত দিয়ে যারা দেশ স্বাধীন করেছেন, তাদের হাজার সালাম। দেশ কেন তারা স্বাধীন করছেন তার যদি লিখিত ও অলিখিত হাজারটা কারণের কথাও বলা থাকে এটা তো নিশ্চিত পরীক্ষায় নকলের সুবিধা দিতে নকলের সুবন্দোবস্ত করতে তারা দেশ স্বাধীন করবেন এ কথা কোথাও থাকবে না। অন্যায় কাজকে যৌক্তিকীকরণ করার জন্য স্বাধীনতার কথা বলব। বুকের রক্ত ঢেলে দেওয়ার কথা বলব এ আমাদের কোন সাংস্কৃতিক উত্তরাধিকার।

সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ুন

প্রতিদিন ৩৫০০+ সংবাদ পড়ুন প্রিয়-তে

আরও