শিক্ষায় অনৈতিক মানুষ গড়ার রাজনীতি
বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে ইডেন মহিলা কলেজ। ৩০ সেপ্টেম্বরের মধ্যে হল ছাড়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। কিন্তু কী হচ্ছে বা কী হয়েছে ইডেন বিশ্ববিদ্যালয় কলেজে? এটা এখন মানুষের মুখে মুখে। কেউ জানতে চান ব্যঙ্গের হাসি হেসে পাশের অপরিচিত নারীর দিকে তাকিয়ে, কেউ জানতে চান উৎকণ্ঠা থেকে কারণ তার কোনো স্বজন পড়ছেন ইডেনে অথবা কেউ জানতে চান একটা বুকভাঙা বেদনা নিয়ে, কারণ তাদের স্মৃতিতে আছে ইডেনের আন্দোলন-সংগ্রামের ইতিহাস।
সেপ্টেম্বর মাসে দুটো খুব গুরুত্বপূর্ণ দিন আছে। একটি হলো ১৭ সেপ্টেম্বর। ১৯৬২ সালের এই দিনে হাজার হাজার ছাত্র-জনতা রাজপথে নেমে এসেছিল, ‘শিক্ষা সস্তায় পাওয়া যাইবে না’, এই সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ জানাতে। শিক্ষার অধিকার থেকে কাউকে বঞ্চিত করা যাবে না, শিক্ষাকে ব্যবসার পণ্য বানানো যাবে না এই দাবিতে আন্দোলন করতে গিয়ে জীবন দিয়েছিল মোস্তফা, বাবুল ও ওয়াজিউল্লাহ। পরে এই দিনকে অভিহিত করা হয়েছে ‘শিক্ষা দিবস’ হিসেবে। আর একটি দিন হলো ২৪ সেপ্টেম্বর। এই দিন দেশের পরাধীনতার শৃঙ্খল ভেঙে স্বাধীনতার সূর্য ছিনিয়ে আনতে জীবন উৎসর্গ করেছিলেন বীরকন্যা প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদার, ব্রিটিশবিরোধী স্বাধীনতাযুদ্ধে প্রথম নারী শহীদ ছিলেন তিনি। ছাত্রসমাজের কাছে এই দিন দুটোর তাৎপর্য ভুলিয়ে দিতে চেয়েছে শাসকগোষ্ঠী। দেশকে ভালোবেসে সংগ্রামে জীবন উৎসর্গ করতে নারীরাও পিছিয়ে থাকবে না এই চেতনা ছড়িয়ে দিতে চেয়েছিলেন তিনি। আরও তাৎপর্যপূর্ণ বিষয় হলো, প্রীতিলতা ছিলেন ইডেন কলেজের ছাত্রী। ছাত্রদের জন্য সংগ্রাম ও ঐতিহ্যের সেপ্টেম্বর মাসে ইডেন কলেজে ক্ষমতাসীন দলের ছাত্র সংগঠন ছাত্রলীগ নেতাদের নিয়ে এ ধরনের কথা শুনতে তো খারাপ লাগারই কথা। দীর্ঘশ্বাসের সঙ্গে অনেকে বলছেন, ৬৯-এর গণ-অভ্যুত্থানে ইডেন কলেজের ছাত্রীদের ভূমিকা, ৯০-এর গণ-অভ্যুত্থানে ছাত্রীদের ভূমিকা আর এখন ছাত্রলীগের নেত্রীদের ভূমিকা কোনোভাবেই মেলানো যায় না।