দেনমোহরে টাকার বদলে বই!

যুগান্তর বদিউর রহমান প্রকাশিত: ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২২, ১১:৩৯

বই কাকে বলে? যে কোনো ভাষার অক্ষরে কিছু লেখা হলেই কি তা বই হয়ে যাবে? ভাব প্রকাশ করতে পারার মাধ্যমে আমরা কতকিছু বলতে চাই, তার কি ইয়ত্তা আছে? আমাদের এ প্রকাশগুলোই অর্থবহ হতে পারলে ওগুলোর সমাহারে বই হয়-এটা আমাদের সাধারণ ধারণা। কিন্তু অর্থবহেরও অনেক অর্থ রয়েছে। মনের মধ্যে কিছুটা আনন্দ দিলেও এটা কিছুটা অর্থবহ, কষ্ট দিলেও তাও না হয় অর্থবহের পর্যায়ে পড়ে; কিন্তু সাময়িক একটু সুড়সুড়ি দিয়ে পরে আর যার কোনো আবেদন থাকবে না, কোনো স্থায়িত্ব থাকবে না তেমন লেখা-সমাহারকে কি বই বলা চলে? আমাদের অনেক কবি, ঔপন্যাসিক, গল্পকার, প্রবন্ধকার, ছড়াকার, রম্য লেখক-কত যে লিখে ফেলেন তার হিসাব কে রাখে? কিন্তু সময়ের পরীক্ষায়, বিষয়বস্তুর আবেদনে, মানুষের হৃদয়গ্রাহী হওয়ার আবেদনে কয়টি টিকে থাকে? অতএব সাপ, ব্যাঙ, কচু-একটা কিছু দিয়ে কিছু পৃষ্ঠা ভরে ফেললেই তা বই হয় না, তাকে বই বলা যায় না।


বই হতে হলে আমি বুঝি, যা একবার পড়ার পর আবার পড়তে মন চায়, যা পড়তে শুরু করলে পড়ে যেতেই ইচ্ছা হয়, যা পড়ার সময় যেমন নিজে তার ভেতর ডুবে যাওয়া যায়, তেমনই পড়া শেষেও যেন তার আবেশ থেকেই যায়, এখানে বছরের কোনো সীমারেখা থাকে না, এর আবেদন কালোত্তীর্ণ-তবে তা হবে বই। ফলে কেউ দিস্তায়-দিস্তায় লিখেও, ডজনে ডজনে বই লিখেও হয়তো একটাও বই দিতে সক্ষম হলো না, আবার বিপরীতে কেউ হয়তো একটা মত্র বই লিখেও কবি, লেখক, সাহিত্যিক হয়ে গেলেন। প্রথমজনের ক্ষেত্রে সংখ্যা বেড়েছে, কিন্তু বই হয়নি; দ্বিতীয়জনেরটি বই হয়েছে, সংখ্যা না বাড়ার মাঝেও তিনি অসংখ্য হয়ে গেলেন। এতদ্বিষয়ে এক সাংবাদিক আমাকে একবার শওকত ওসমানের একটা গল্প শুনিয়েছিলেন। ওই সাংবাদিকের ভাষ্যমতে, শওকত ওসমানকে এক সাংবাদিক না কে যেন প্রশ্ন করেছিলেন, ওমুক (এখানে সংগত কারণেই নাম উল্লেখ করলাম না) তো বছরে এত এত বই লেখেন, তার বইয়ের জন্য তো অনেকে হুমড়ি খেয়ে পড়ে, আপনি তো অনেক সময়ে বছরেও একটাও লিখতে পারেন না, কিন্তু লোকে বলে আপনি নাকি বড় সাহিত্যিক, এর কারণটা কী? শওকত ওসমান নাকি সহজভাবে জবাব দিয়ে ছিলেন-একটা প্রাণী বছরে একসঙ্গে ৭-৮টা বাচ্চাও দেয়, প্রতিবছরেই দেয়, কিন্তু মানুষ কবছরে একটা দেয়? ও প্রাণীগুলোর কয়টা শেষ পর্যন্ত টিকে থাকে?



আমি ছাত্রাবস্থা থেকে বাচ্চাদের ছোট অনুষ্ঠানে, সুন্নাতে খতনায়, নাক ফোঁড়ানো, কান ফোঁড়ানোতে, আকিকায়, বড়দের বিয়েতে উপহার হিসাবে অ্যালবাম এবং বই দিতাম। অ্যালবাম এখনো আমার প্রিয়। জীবনে প্রথম দক্ষিণ কোরিয়া গিয়েই বড়-সুন্দর অ্যালবাম কিনেছিলাম। এতে জীবনটা স্তরে স্তরে ধরে রাখা যায়। জীবনের বিবর্তনের ছবি এতে ঠাঁই পায়, অবসরে কিংবা বিষাদগ্রস্ত অবস্থায় এটা আবার জীবন দেয়। মনে খোরাক জোগায়-আমি কখনো এমন ছিলাম, আবার কখনো এমন হয়েছি। অ্যালবাম জীবনের একটা জীবন্ত প্রতীক। আর বই-সে তো আলাদা একটা জগৎ সৃষ্টি করে। বইয়ের সমাহারে সৃষ্ট লাইব্রেরিকে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের চেয়ে আর সুন্দর করে কে বলতে পেরেছেন-মহাসমুদ্রের শতবর্ষের গর্জনকে কেউ যদি...। বিয়ের অনুষ্ঠানে আমার বই উপহার দেওয়াকে বন্ধু-সঙ্গীদের কেউ কেউ আমার আর্থিক অসচ্ছলতার প্রতি ইঙ্গিত করত। হতে পারে, সোনা-রুপার চেয়ে তাদের বিবেচনায় বইয়ের দাম কম। পরে আমি অনেক বছর বিয়েশাদিতে কোনো উপহারই দিইনি। আমাদের সমাজব্যবস্থাটাই হয়তো এমন হয়েছে যে, আমি কার কার সন্তানের বিয়েতে কী কী দিয়েছিলাম, এখন আমার সন্তানের বিয়েতে তারা কে কী দিলেন-তা যেন উপহার-প্রাপ্তির তালিকা দেখে মিলিয়ে দেখতেই হবে।


গরিবজনরা না হয় তার খরচ পোষাতে এমন ভাবতে পারে, কিন্তু সামর্থ্যবানরাও কেন যে দাওয়াত দিয়ে ভাতের পয়সা ওঠানোর জন্য উপহার-টেবিল বসায় আমার মাথায় ধরে না। আমি বলি এদের অর্থবিত্ত হয়েছে, সমাজে তথাকথিত জাতে উঠেছে, গাড়ি-বাড়ি সব হয়েছে, কিন্তু মন তাদের ছোটই রয়ে গেছে, এদের খাই খাই আর পাই-পাই ভাব কখনো যাবে না। এখন আমিও বুদ্ধিমান হয়েছি, নগদ টাকা দিয়ে দিই, ভালো করছি না? এক বন্ধুকে দেখেছি, সে তার সন্তানের বিয়েতে প্রাপ্ত ক্রোকারিজ, শাড়ি, ঘড়ি-এসব নতুন রঙিন মোড়কে অন্যের অনুষ্ঠানে চালিয়ে দিচ্ছে। বুদ্ধি থাকলে...। আজ মনে পড়ে, অনেক বছর আগে, আমার প্রিয় ছাত্র অধ্যাপক ডা. আবু হানিফের (বর্তমানে পরিচালক, জাতীয় নাক কান ও গলা ইনস্টিটিউট) বিয়েতে আমি নিজে নিউমার্কেট থেকে কবি শামসুর রাহমান এবং আরও দুজন কবির কবিতার বই উপহার দিয়েছিলাম। বিয়ের কয়েকদিন পর এ ছাত্রটাই বই দেওয়ার জন্য আমাকে ধন্যবাদ দিলেন। জীবনে বই উপহার দেওয়ার জন্য আর কারও কাছ থেকে একবারও ধন্যবাদ পাইনি। বড় বোনের বিয়েতে (১৯৬০) প্রাপ্ত উপহারের আকবর হোসেনের অবাঞ্ছিত, কী পাইনি, ঢেউ জাগে উপন্যাস আমার তখন বেশ ভালো লেগেছিল।

সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ুন

প্রতিদিন ৩৫০০+ সংবাদ পড়ুন প্রিয়-তে

আরও