ইনডেমনিটি—মোশতাক থেকে জিয়া ও আজকের বিএনপি
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যার জন্য কারা দায়ী তার পরিপূর্ণ ফায়সালা এখনো হয়নি। হঠাৎ করেই বঙ্গবন্ধু নিহত হয়েছেন বা তাঁকে হত্যা করা হয়েছে এমন কিছু এটা নয়, এ কথা সবাই বোঝে। এর বিশাল প্রেক্ষাপট রয়েছে, তেমনি রয়েছে এর ভয়ংকর পরিণতি। এত বছর হয়ে গেলেও এর প্রেক্ষাপট ও পরিণতি—দুটিই বাংলাদেশের রাষ্ট্র ও রাজনীতির জন্য এখনো অতি গুরুত্বপূর্ণ।
এত বড় একটি হত্যাকাণ্ড, যার নজির বিশ্বে নেই, তার প্রেক্ষাপট সঠিক ও আনুষ্ঠানিকভাবে কখনো উদঘাটিত হবে কি না জানি না। আবার এটিও জানি না যে এর ভয়ংকর যে পরিণতি, তার থেকে বাংলাদেশ কখনো মুক্ত হতে পারবে কি না। এর পরিণতির ভয়াবহতার কথা সবাই জানার পরও কেন জানি তার থেকে বাংলাদেশের রাষ্ট্র ও রাজনীতিকে মুক্ত করার বলিষ্ঠ ও কার্যকর কোনো প্রচেষ্টা নেই। বরং আদর্শগতভাবে বাংলাদেশের মানুষ উল্টো দিকে হাঁটছে। এ নিয়ে কারো মাথাব্যথা নেই। সবাই নগদ নিয়ে ব্যস্ত। তবে সামনের সারিতে থেকে যারা সরাসরি বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডে অংশ নিয়েছে, তাদের বিচার হয়েছে। কয়েকজনের দণ্ড কার্যকর হয়েছে আর ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত কয়েকজন বিদেশে পালিয়ে আছে। চূড়ান্ত রায়ের পর প্রায় ১৩ বছর পেরিয়ে গেলেও পলাতকদের একজনকেও ফিরিয়ে আনা যায়নি। কেন যায়নি, এই প্রশ্নের উত্তর বাংলাদেশের রাষ্ট্র ও রাজনীতির জন্য গুরুত্বপূর্ণ। একই সঙ্গে বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে এর প্রভাব কতখানি গুরুত্বপূর্ণ তার চুলচেরা বিশ্লেষণও খুবই প্রয়োজন।
প্রায় সব দেশের ইতিহাসে দু-চারটি এ রকম ঘটনা পাওয়া যাবে, যেখানে দেখা যায় বড় বড় রাজনৈতিক ও চাঞ্চল্যকর হত্যাকাণ্ডের বিচার হয়নি অথবা করা যায়নি অথবা হতে পারে, বিচার হতে দেওয়া হয়নি। কিন্তু অপরাধী বা হত্যাকারীর বিচার করা যাবে না, সুনির্দিষ্টভাবে এ রকম কোনো আইন মানবসভ্যতার ইতিহাসে কখনো হয়নি, একটি উদাহরণও নেই। তাই বাংলাদেশের চলমান রাজনৈতিক সংকট বুঝতে হলে এর শিকড়ে কারা রয়েছে এবং তাদের ডালপালার বর্তমান অবস্থান সম্পর্কে সবার জানা থাকা উচিত। মহৎ উদ্দেশ্যে রাষ্ট্রের বৃহত্তর স্বার্থ ও লক্ষ্য অর্জনে কোনো বাহিনী নিয়োজিত হলে সেখানে কোল্যাটারাল ড্যামেজ বা অনিচ্ছাকৃত অপরাধের দায়মুক্তি অনেক দেশে অনেক সময় হয়েছে, যার অন্য উদাহরণ বাংলাদেশেও আছে। কিন্তু বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের বিষয়টি সম্পূর্ণ আলাদা। প্রথমত, এই হত্যাকারীরা কোনো কাজের জন্য রাষ্ট্রীয়ভাবে দায়িত্বপ্রাপ্ত হয়নি। তাই এই হত্যাকারীরা রাষ্ট্রদ্রোহী। দ্বিতীয়ত, তারা নিজেরাই বলেছে, তারা জাতির পিতা শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যা করেছে। অর্থাৎ আত্মস্বীকৃত খুনি। আত্মস্বীকৃত কথাটি এখানে গুরুত্বপূর্ণ। কারণ কারা এই জঘন্যতম নৃশংস হত্যাকাণ্ড চালিয়েছে, তা নিয়ে কোনো বিতর্ক নেই, সন্দেহ বা মতভেদ নেই। সুতরাং বিষয়টি শতভাগ স্পষ্ট।