সত্য কথাটি বলে ফেলার জন্য মির্জা সাহেবকে ধন্যবাদ
বিএনপিতে তিনজন স্বনামে খ্যাত মির্জা সাহেব আছেন। প্রথমজন মির্জা গোলাম হাফিজ। জিয়া ক্ষমতা দখল করে ১৯৭৯ সালে নির্বাচনের নামে একটি তামাশা করে একটি সংসদ গঠন করেছিলেন। সেই সংসদে স্পিকার বানিয়েছিলেন মির্জা গোলাম হাফিজকে।
কেতাদুরস্ত মানুষ। ১৯৫৪ সালে যুক্তফ্রন্টের প্রার্থী হিসেবে প্রাদেশিক পরিষদের সদস্যও নির্বাচিত হয়েছিলেন। আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলায় আইনজীবী হিসেবে প্যানেলে অন্তর্ভুক্ত ছিলেন। রাজনীতিতে তিনি ছিলেন মওলানা ভাসানীর অনুসারী। বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করার পর বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জেনারেল জিয়া ক্ষমতা দখল করলে তিনি ১৯৭৮ সালে তাঁর মন্ত্রিসভায় যোগ দেন। ১৯৭৯ সালে জিয়া সংসদ নির্বাচনের নামে যে তামাশার আয়োজন করেন, সেই নির্বাচনে তিনি পঞ্চগড় থেকে বিএনপির দলীয় প্রার্থী হিসেবে বিজয়ী হয়ে ২ এপ্রিল সংসদের স্পিকার নিযুক্ত হন। ব্যক্তিগতভাবে তিনি বিএনপির অন্য মির্জা দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের নিকটাত্মীয়।
সব ঠিক চলছিল। গোল বাধল যখন বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যার পর তাঁর দুই জীবিত কন্যার প্রথমজন শেখ হাসিনা দিল্লিতে ছয় বছর প্রবাসজীবন শেষ করে আওয়ামী লীগের সভাপতি হিসেবে ১৯৮১ সালে দেশে ফিরবেন বলে ঠিক করলেন তখন। বিএনপি আর বঙ্গবন্ধুর ঘাতকদের পৃষ্ঠপোষকতায় গঠিত হলো শেখ হাসিনা স্বদেশ প্রত্যাবর্তন ঠেকাও কমিটি। আহ্বায়ক নিযুক্ত হলেন মির্জা গোলাম হাফিজ। বঙ্গবন্ধুর কন্যা দেশে ফিরছেন—এই সংবাদে দেশে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের মাঝে যে আনন্দ আর উত্তেজনা সৃষ্টি হয়েছিল, সেই পরিস্থিতি দেখে এই কমিটি গুটিয়ে যায়। এই মির্জা সাহেব বেগম জিয়ার মন্ত্রিসভায়ও ঠাঁই পেয়েছিলেন। বর্তমানে তিনি প্রয়াত।
মির্জা আব্বাস বিএনপির দ্বিতীয় মির্জা। বেগম জিয়ার শাসনামলে বিভিন্ন সময় তিনি সংসদ সদস্য, ঢাকার মেয়র, মন্ত্রীর পদে অধিষ্ঠিত ছিলেন। মাঝেমধ্যে তাঁকে বিএনপির আওয়ামী লীগ ও সরকার বিরোধী সভা-সমাবেশ, মানববন্ধনে দেখা যায়। তিনিও আরো কয়েকজন টোকাই রাজনৈতিক নেতার মতো ঘোষণা করেন সরকারের পায়ের নিচে মাটি নেই, টোকা দিলেই পড়ে যাবে। এক বছর ধরে এই ব্যক্তিদের সরকারের বিরুদ্ধে টোকাটুকি চলছে, যেন সরকার ক্যারম খেলার কোনো ঘুঁটি। এসব কথা বিএনপির মতো একটি বড় দলের নেতা-নেত্রীরা যেমন বলেন, ঠিক তেমনি স্বামী-স্ত্রী পার্টির নেতারাও ইদানীং বলে থাকেন।
সব শেষে এই মুহূর্তে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ মির্জা বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। সবাই জানে তাঁর বাবা চোখা মিয়া নিজ এলাকা ঠাকুরগাঁওয়ে শান্তি কমিটির চেয়ারম্যান ছিলেন। মুক্তিযুদ্ধের এক পর্যায়ে মির্জা ফখরুল বাবাকে নিয়ে ঠাকুরগাঁও সীমান্তের ওপারে তাঁর নানাবাড়িতে চলে গিয়েছিলেন। কিছুদিন পর আবার ফিরে এসেছিলেন। রাজনীতি শুরু করেন চীনপন্থ্থী ছাত্র ইউনিয়নের হাত ধরে। পরে মওলানা ভাসানীর ন্যাপ। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাস করে সরকারি কলেজসহ অন্যান্য সরকারি দপ্তরেও কাজ করেছেন। ১৯৯১ সালে বিএনপির প্রার্থী হিসেবে ঠাকুরগাঁও থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। পরে বেগম জিয়ার মন্ত্রিসভায়ও ঠাঁই পান। ২০১১ সালে তিনি দলের মহাসচিব মনোনীত হন। ২০১৮ সালের নির্বাচনে বিজয়ী হয়েও সংসদ সদস্য হিসেবে শপথ নেননি। বিএনপির পলাতক ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বারণ ছিল।