বই গছানো বই বিপণনের শিল্প
বইপত্রের এখন সুদিন। বইপত্রবিষয়ক সংবাদ কাগজের প্রথম পাতায় ছাপা হচ্ছে। দুটি কাহিনীএকটি দেখা এবং একটি পড়া পুনরাবৃত্তি করে লেখাটা শুরু করতে চাই।
দেখা কাহিনী
গত শতকের ষাটের দশকের দ্বিতীয় ভাগে সরকারি কর্মকর্তাদের জন্য নির্ধারিত কোয়ার্টারগুলোর একটি টয়লেটে পূর্বস্থাপিত ফ্ল্যাট প্যান অপসারণ করে কমোড বসানো কেবল শুরু হয়েছে। কমোড স্ট্যাটাসেরও প্রতীক। দূরসম্পর্কিত আত্মীয় একজন কর্মকর্তার সরকারি বাড়িতে যাওয়ার সুযোগ হয়। মধ্যাহ্নভোজেরও। খাওয়ার আগে মূত্রপাত অনিবার্য হয়ে ওঠার ইঙ্গিত করতেই আমাকে যে দরজা দেখানো হলো, এগিয়ে এসে দেখি দরজার গোড়ায় বেশ কটা একই ধরনের মোটাসোটা বই। বুক শেলফে জায়গা না থাকলে টয়লেটের (এখন অবশ্য অধিকতর আদরণীয় শব্দ ওয়াশরুম বলা হয়) ভেতরে ও বাইরে বই রাখা এমন দোষের কিছু নয়। আমি বেরোনোর সময় একটি বই হাতে তুলে নিই এবং নামটাও দেখি। এটি গৃহকর্ত্রীর নজরে পড়ে।
তিনি বললেন, আমাদের ফাহিমের কমোডে বসতে অসুবিধে হয়, ছোট তো, তাই বইগুলো বিছিয়ে সিঁড়ির মতো ব্যবহার করে কমোডে বসে। কাজ হয়ে গেলে বুয়া আবার বইগুলো বের করে দরজার কাছে রেখে দেয়। একটা ছোট মোড়া কেনার কথা বলেছি, কবে কিনবে কে জানে। ততক্ষণে আমি খাবার টেবিলে। আত্মীয় স্বল্পভাষী কর্মকর্তা বললেন, বই দিয়ে যখন কাজ চলছে, মোড়া কেনার কী দরকার।
একটি মন্তব্য করে সাড়ে তিন চার-বছর বয়সী ফাহিম আলোচনার উপসংহার টানল, ‘আসলে বই-ই ভালো।’
তারপর চুপচাপ খেতেই হলো, স্বল্পভাষী কর্মকর্তারা স্বল্পশ্রবণেই বিরক্ত হয়ে ওঠেন। তিনি ফাহিমকে উদ্দেশ করে আমাদের সবাইকে বললেন, ‘নো টক, প্লিজ।’ বইটার নাম ‘উন্নয়নের দশ বছর’।
পরবর্তী অর্ধশতকেরও বেশি সময়ে বইপত্রের এ ধরনের ব্যবহার হামেশাই চোখে পড়েছে, এখনো পড়ছে। ২০৭১-এ বাংলাদেশের শতবর্ষ পূর্তির সময়ও চোখে পড়বে, তখন হয়তো ব্যবহারে বৈচিত্র্যও বাড়বে।
পড়া কাহিনী
উপাসনাগারগুলোতে ধর্মগ্রন্থের কিছু সংগ্রহ থাকেই। চার্চেও বাইবেল থাকে। কিন্তু ধর্মযাজক লক্ষ করলেন তার ধর্মগ্রন্থের মজুদ কমে আসছে। এতে তিনি বিচলিত না হয়ে ঈশ্বরকে ধন্যবাদ জানালেন, কারণ তার কৃপায় মানুষের সুমতি হচ্ছে, সাধ্যে কুলোচ্ছে না বলে বাজার থেকে বাইবেল কিনতে পারছে না, চার্চ থেকে সংগোপনে নিয়ে যাচ্ছে। ধর্মযাজক কমে যাওয়া মজুদ পূর্ণ করতে চার্চের টাকায় আবার কিনছেন; আবারও কিনছেন, কিন্তু টাকায় আর কুলিয়ে উঠতে পারছেন না, কিন্তু ঈশ্বরকে তার কৃপার জন্য, মানুষের সুমতি ফিরে আসার জন্য অবিরাম কৃতজ্ঞতা জানিয়ে যাচ্ছেন। তার পরও তার মনে খটকা লাগল, চুরির ব্যাপারটা গোয়েন্দা পুলিশকে জানালেন এবং বললেন, কাজটা নিশ্চয়ই পুণ্যবান প্যারিশিয়ানরাই (প্যারিশ বা চার্চভুক্ত জনগণ) করছেন, তারা যেন কোনো হেনস্তার শিকার না হন। তাহলে মানুষ চার্চবিমুখ ও ঈশ্বরবিমুখ হয়ে পড়বে। বেশ কদিন পর্যবেক্ষণ করার পর পুলিশ নিশ্চিত হয়, কাজটা একজনই করছেন। ওভারকোটের ভেতরের পকেটে ও দুই বগলতলায় বাইবেল ঢোকাতেই পুলিশ তাকে হাতেনাতে ধরে ফেলল এবং বলল, জনাব এটা ঈশ্বরের ঘর, এগুলো ঈশ্বরের গ্রন্থ আর আপনি এগুলো দিনের পর দিন চুরি করছেন?