রাজধানী ঢাকা ও এর আশপাশের মোট ১ হাজার ৫২৮ বর্গকিলোমিটার এলাকার জন্য আবারও একটা বিশদ অঞ্চল পরিকল্পনা ড্যাপ প্রণয়ন করেছে সরকার। শুক্রবার সমকালের এক প্রতিবেদন অনুসারে, নতুন এ ড্যাপ, যাকে সংশোধিত ড্যাপ বলা হচ্ছে- সরকার গত ২৩ আগস্ট গেজেট আকারে প্রকাশ করেছে এবং ওই গেজেট অনুসারে এর মেয়াদ হবে ২০৩৫ সাল পর্যন্ত। ঢাকায় একটা পরিকল্পিত নগরায়ণ উপহার দেওয়ার কথা বলে এর আগে ২০১০ সালেও একটা ড্যাপ গেজেট আকারে সরকার প্রকাশ করেছিল, যার মেয়াদ শেষ হয়েছিল ২০১৫ সালে। এ কারণেই নতুন এ ড্যাপকে সংশোধিত ড্যাপ বলা হচ্ছে। এ ড্যাপ নিয়ে মন্তব্য করার আগে বলে নেওয়া দরকার, নিয়ম অনুসারে সংশোধিত ড্যাপ কার্যকর হওয়ার কথা ছিল ২০১৬ সালে। কিন্তু এর গেজেট হলো নির্ধারিত সময়ের ছয় বছর পর! এ ঘটনা থেকে কেউ যদি ড্যাপ বিষয়ে সরকারের আন্তরিকতা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন, তাহলে তাঁকে নিশ্চয় দোষ দেওয়া যাবে না। আমাদের মনে আছে, প্রথম ড্যাপ কার্যকর হওয়ার কথা ছিল ১৯৯৫ সালে। কিন্তু তার গেজেট হয় এর ১৫ বছর পর। তখনও ড্যাপ বাস্তবায়নে সরকার আসলেই কতটুকু আন্তরিক- সে প্রশ্ন সচেতন মহল থেকে উঠেছিল। মাত্র পাঁচ বছরে এত বড় পরিকল্পনা যে বাস্তবায়ন অসম্ভব- সে কথাও অনেকে তখন বলেছিলেন। শুধু তাই নয়; তখন সরকার বিশেষ করে প্রভাবশালী রিয়েল এস্টেট ব্যবসায়ীদের বাধার মুখে ড্যাপ বাস্তবায়ন বন্ধের পাশাপাশি কোনো কোনো ক্ষেত্রে ওই ব্যবসায়ীদের স্বার্থে তাকে বিকৃতও করে। সংশোধিত ড্যাপ প্রণয়নে বিলম্বের পেছনে এসব ঘটনার একটা ভূমিকা থাকতে পারে বলে অনেকে মনে করেন।
রাজধানী ঢাকা শহর যে ধীরে ধীরে বসবাসের অনুপযোগী হয়ে পড়ছে- এ নিয়ে কোনো মহলেই বিতর্ক নেই। অপরিকল্পিত নগরায়ণ তো আছেই; এর সঙ্গে চলছে প্রায় বাধাহীন দখল আর দূষণ। তা ছাড়া দশকের পর দশক ধরে সরকারের রাজধানীকেন্দ্রিক ভুল প্রশাসনিক ও উন্নয়ননীতির কারণে প্রতিবছর এখানে জীবিকা ও আশ্রয়ের সন্ধানে ভিড় করছে অন্তত ৪ লাখ মানুষ। এ অবস্থায় ৪০০ বছরের ঐতিহ্যের ধারক এ শহরকে বাঁচাতে হলে কোনো বিচ্ছিন্ন-বিক্ষিপ্ত পরিকল্পনা দিয়ে কাজ হবে না; তা সম্ভবত সরকারও বোঝে। এ কারণেই এ শহরের উন্নয়নে ড্যাপ প্রণয়নের তাগিদ অনুভব করে তারা। কিন্তু দুঃখজনকভাবে প্রথম ড্যাপ প্রায় সব মহলে প্রশংসিত হলেও স্রেফ একটা কায়েমি স্বার্থবাদী মহলের বিরোধিতার কারণে তা তারা কার্যকর করতে পারেনি। আবার নতুন যে ড্যাপ প্রণীত হলো, তাও কতটুকু বাস্তবায়নযোগ্য- তা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। যেমন এবারের ড্যাপে পান্থপথের ১০০ ফুট রাস্তা তুলে দিয়ে নৌপথ তৈরি করে হাতিরঝিলের সঙ্গে যুক্ত করার এক অবাস্তব প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। তা ছাড়া এ শহরে কিছু ঘিঞ্জি এলাকা আছে, যেখানে ভবনগুলো গায়ে গা লাগিয়ে দাঁড়িয়ে আছে; একটুও উন্মুক্ত স্থান নেই। সেখানেও খেলার মাঠ তৈরির প্রস্তাব করা হয়েছে, যা অত্যন্ত দুরূহ একটা কাজ। তবে নতুন ড্যাপে বেশ কিছু ভালো পরিকল্পনার কথা আছে, যেগুলো শুধু বাস্তবায়নযোগ্য নয়; বাস্তবায়িত হলে রাজধানীর বর্তমান এলোমেলো চেহারা অনেকাংশেই পাল্টে যাবে। যেমন সেখানে জমির আবাসিক-বাণিজ্যিক মিশ্র ব্যবহার, ছোট ছোট জমিকে ব্লকে পরিণত করে, সেখানে বহুতল ভবন নির্মাণ, জনঘনত্ব অনুসারে জোনিং প্রথা চালু, হাঁটার পথ, নতুন রাস্তা, জলাধার বাড়ানো ইত্যাদি বিষয়ে প্রস্তাব করা হয়েছে, যেগুলো এ শহরকে বসবাসের যোগ্য করার ক্ষেত্রে খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
- ট্যাগ:
- মতামত
- বাসযোগ্য শহর