মন্ত্রীদের বচনামৃত ও দেশের বাস্তবতা

www.ajkerpatrika.com প্রকাশিত: ২০ আগস্ট ২০২২, ২১:২৯

১২ আগস্ট সিলেটে এক মতবিনিময় সভা শেষে দেশের বর্তমান অর্থনৈতিক অবস্থা নিয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাব দিতে গিয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন বলেছেন, ‘আমরা তো বেহেশতে আছি’। জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির প্রভাবে নিত্যপণ্যের দাম বাড়া প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘সারা বিশ্বে মন্দার ভাব আসছে। করোনা ও রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে বিভিন্ন দেশের মতো আমাদের দেশেও মন্দা এসেছে। তবে অন্যান্য দেশের তুলনায় আমাদের ইনফ্লেশন রেট নিচে আছে। আমরা তো সুখে আছি। বেহেশতে আছি বলতে হবে।’ পররাষ্ট্রমন্ত্রীর এ বক্তব্য নেট দুনিয়ায় ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়ে মানুষের মধ্যে আলোড়ন সৃষ্টি করে। নিত্যপণ্যের দাম বাড়ায় মানুষ যখন হিমশিম খাচ্ছে, তখন বেহেশতের কথা বলে তিনি ‘নিষ্ঠুর’ মনোভাব দেখিয়েছেন বলেও সমালোচনা হচ্ছে।


ঢাকার একটি দৈনিক পত্রিকার প্রথম পৃষ্ঠায় মন্ত্রী মহোদয়ের দেওয়া বক্তব্যের শিরোনাম দেওয়া হয়েছে, ‘বেহেশতে আছে বাংলাদেশের মানুষ’। পাশাপাশি আরেকটি শিরোনাম হলো, ‘দুজনের সংসারই চলে না, সন্তান কীভাবে নেব’! পাঠক নিশ্চয়ই বুঝতে পারছেন দুই বক্তব্যের অমিলের জায়গা কোথায়।


দ্রব্যমূল্যের লাগামহীন ঊর্ধ্বগতির ফলে প্রান্তিক মানুষের নিত্যদিনের জীবন যাপনের কী হাল তা ভুক্তভোগীরা হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছে। সেদিন রিকশায় একটি কাজে বাইরে বেরিয়েছিলাম। রিকশা থেকে নেমে ভাড়া দিতেই রিকশাচালক বকশিশের জন্য হাত বাড়ালেন। কিছু টাকা হাতে দিতেই তিনি ক্ষোভের সঙ্গে বলে উঠলেন, ‘স্যার, কইতে পারেন, আমরা যামু কই? হাত না বাড়াইয়া করমু কি? না খাইয়া মরণের দশা অইছে। কাঁচা মরিচ যদি ১৮০ টাকা কেজি কইরা কিনতে অয়, তাইলে আমাগোর মতো গরিবেরা যাইব কই? আর ওদিকে মন্ত্রীরা কইয়া বেড়াইতাছে আমরা নাকি বেহেশতে আছি। স্যার, বেহেশতে যাওয়া কি এতই সহজ?’


রিকশাচালকের প্রশ্নের কোনো উত্তর দিতে পারিনি। বিষয়টি আমার এক অধ্যাপক বন্ধুর সঙ্গে শেয়ার করতেই তিনি বলে বসলেন, ‘কেন? বেগুনের মূল্য বৃদ্ধি পাওয়ায় আমরা মিষ্টিকুমড়ো দিয়ে বেগুনি বানিয়ে খাইনি? দাম যখন বেড়েছেই, কাঁচা মরিচ না খেলেই তো চলে!’


বন্ধুর কথারও কোনো উত্তর দিইনি। মনে মনে ভেবেছি তিনি হয়তো কথার কথা বলেছেন। মানুষ এখন এমন একটি সংকটের ভেতর দিয়ে যাচ্ছে যে সংসারে নতুন সন্তান নিতেও সাহস পাচ্ছে না।


হঠাৎ করেই জ্বালানি তেলের রেকর্ড মূল্যবৃদ্ধিতে সর্বব্যাপী যে বিরূপ প্রভাব পড়েছে, তাতে ক্ষমতাসীন দলের নেতা-নেত্রী থেকে শুরু করে সাধারণ কর্মীরা উপলব্ধি করলেও সরকারের কিছু মন্ত্রী তাঁদের বক্তব্যের মাধ্যমে জনগণের সামনে ‘শাক দিয়ে মাছ ঢাকা’র যে চেষ্টা করছেন, তা সত্যিই হাস্যকর। নুন আনতে পান্তা ফুরায় এমন দরিদ্র মানুষেরা যখন বেঁচে থাকার লড়াই করছে, তখন মন্ত্রীদের এসব অযৌক্তিক কথাবার্তা সত্যিই দুঃখজনক।


১০ আগস্ট সুনামগঞ্জে এক অনুষ্ঠানে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান বলেছেন, ‘যারা আমাদের পছন্দ করে না, তারা বলছে জিনিসপত্রের দাম বেড়েছে, মানুষ মারা যাবে। জিনিসপত্রের দাম কিছুটা বেড়েছে সত্য, তবে জিনিসপত্রের দাম বাড়ায় এখনো কেউ মারা যায়নি।’


একই তারিখে ঢাকার এক অনুষ্ঠানে স্থানীয় সরকারমন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম বলেছেন, ‘দেশে কেউ না খেয়ে নেই। গায়ে জামা-কাপড় আছে।’ এর আগে ‘মানুষ চাইলে তিন বেলা মাংস খেতে পারে’ বলে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদমন্ত্রী শ ম রেজাউল করিমের আশার বাণী এবং স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খানের ‘ভবিষ্যতে দারিদ্র্য দেখতে মিউজিয়ামে যেতে হবে’ মন্তব্যও সাধারণ মানুষের ভেতর বিরূপ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করেছিল। এই দুর্মূল্যের বাজারে কতিপয় মন্ত্রীর এসব অবিবেচনাপ্রসূত বক্তব্য যেন মানুষের কাটা ঘায়ে লবণের ছিটা দেওয়ার মতো। মন্ত্রীদের এসব বক্তব্য নিয়ে আওয়ামী লীগের জ্যেষ্ঠ নেতারাও বিরক্ত। তাঁরা বলেছেন, যাঁরা অরাজনৈতিক, তাঁদের মুখেই এসব শোভা পায়। প্রকৃত রাজনৈতিক নেতারা এসব কথা বলতে পারেন না। তাঁরা আরও বলেছেন, যাঁরা গুরুত্বপূর্ণ পদে বসে আছেন, তাঁদের আরও দায়িত্বশীল হওয়া উচিত। আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কাজী জাফরউল্যাহ পররাষ্ট্রমন্ত্রীর দেওয়া বক্তব্য প্রসঙ্গে বলেছেন, ‘মন্ত্রী হয়তো নিজের কথা বলেছেন। তবে সবাই কি সেটা মনে করেন? দলীয় নেতা-কর্মী, এমপি-মন্ত্রী সবাইকে আরও সতর্ক হয়ে কথা বলা উচিত।’ আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম মন্ত্রীদের দায়িত্বজ্ঞানহীন বক্তব্যে অসন্তোষ প্রকাশ করে বলেছেন, ‘জনমনের প্রত্যাশার বাইরে গিয়ে উল্টাপাল্টা কথা বলা উচিত নয়।’

সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ুন

প্রতিদিন ৩৫০০+ সংবাদ পড়ুন প্রিয়-তে

আরও