পুড়ে-থেঁতলে-ডুবে ও ভুগে মরার শাস্তি কি আমাদের ভবিতব্য?
মানুষ দুই রকম—জীবিত ও মৃত। এই দেশে এখন এক দল অপঘাতে মরে, আরেক দল তাদের নিয়ে আহাজারি করে। হয় নিহত হয়ে মর্গে শুয়ে থাকা, নয়তো মর্গের সামনে শোকে আকুল হয়ে আহাজারি করা—এই দুই ভূমিকাই বরাদ্দ আমাদের। লালবাগের হোটেলশ্রমিকেরা কিছুই করেননি। সারা দিন কাজ করে ক্লান্ত হয়ে ঘুমিয়ে ছিলেন। সেখানেই পুড়ে মারা গেছেন তাঁদের ছয়জন। ঘুমের আগে কি তাঁরা নিজেদের মধ্যে গল্পগুজব করেছিলেন? মোবাইল ফোনে কথা বলেছিলেন গ্রামে থাকা শিশুসন্তান কিংবা বৃদ্ধ মা–বাবার সঙ্গে। বলতে হয় তাই বলেছিলেন, ‘ভালো আছি মা’ বা ‘ভালো আছি বাবা।’ সন্তানকে বলেছিলেন হয়তো, ‘ও আমার জানটা, বাবা কত দিন পরেই আসব।
এবার যদি স্কুলে ভালো করে পড়ো, তাহলে বাবা সাইকেল কিনে দেব।’ কিন্তু ঘুমের পরে কোন সকাল আসবে, তা তাঁরা জানতেন না। তন্দ্রাও এখন আর নিরাপদ নয়।
বিয়েবাড়ির হইচই-রং–তামাশা শেষে বাড়ি ফিরছিল একটি পরিবার। সবাই হাসিখুশি। বউভাতের রান্নার কোন পদ কতটা ভালো ছিল। মেয়েদের কে বেশি সেজেছিল, কে বেশি ঢং করছিল—এসব নিয়ে তাঁদের কথাই হয়তো থামছিল না। আর শিশু দুটির হয়তো মনই খারাপ ছিল। বিয়েবাড়ি থেকে কিছু বেলুন তারা আনতে চেয়েছিল, কিন্তু তাদের মা দেননি। হয়তো বলেছিলেন, ফেরার পথে দোকান থেকে কিনে দেবেন।
জান্নাতুল ও জাকারিয়া নামের ওই শিশু দুটি হয়তো ভাবছিল, বাড়ি ফিরে আজ বেলুন নিয়ে কী কী মজা তারা করবে। পাশের বাড়ির বন্ধুদেরও তারা ডাকবে। কিন্তু তারা আর বাড়ি ফিরতে পারেনি, সপরিবার চাপা পড়েছে মহাসড়কে, মহা উন্নয়নের তলে।
মানুষ এমনই। যারা অতিসাধারণ, তাদের স্বপ্ন তত সাধারণ হয় না সব সময়। হয়তো ওই হোটেলশ্রমিদের কেউ সন্তানকে বড় কোনো মানুষ বানানোর স্বপ্ন দেখতেন। হয়তো শিশুদের কেউ ভাবত কোনো ছোট্ট স্বপ্নের কথা। বড় হয়ে একদিন মাকে নিয়ে বিদেশ ঘুরব। ‘মনে করো, যেন বিদেশ ঘুরে মাকে নিয়ে যাচ্ছি অনেক দূরে…’।