বিতর্কিত রবীন্দ্রনাথ?
মৃত্যুর আশি বছর পেরিয়ে গেছে; আর দুই দশক পেরুলেই পৌঁছে যাবেন একশ বছরের কোঠায়। কিন্তু তাকে ঘিরে গড়ে ওঠা বিতর্কের বয়স আরও বেশি দীর্ঘ। হ্যাঁ, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের পিছু ছাড়েনি বিতর্কের বাঘ! অনেকেই হামলে পড়েছেন, নখদন্ত বিকশিত করে ছড়িয়ে দিয়েছেন রক্তাক্ত অক্ষর; পরিহাস এই যে, ইতিহাসের দিগন্তে তাদের কেউ কেউ বাঘ থেকে হয়ে গেছেন বাঘডাসা, কেউ কেউ আদতেই ছিলেন কাগজের বাঘ!
রবিকরোজ্জ্বল বঙ্গদেশে তারা কেউই উজ্জ্বল হয়ে বিচ্ছুরিত হননি। কারণ তাদের তর্ক ছিল অনৈতিহাসিক; ব্যক্তিগত ঈর্ষা কাতরতায় কেউ কেউ পুড়ে গিয়েছেন আপন অঙ্গারে। তাতে করে রবির কিরণের দ্যুতি কমেনি। তাকে ঘিরে আজও বয়ে চলে বিতর্কের হল্লা।
আপন মনের মাধুরী মিশিয়ে শতবর্ষ ধরে বাঙালি তৈরি করে নিয়েছে রবীন্দ্র-গুজব। সেসবের কয়েকটি নিশ্চয়ই অনেকের জানা; একটি এরকম—কাজী নজরুল ইসলামকে ধুতুরার বিষ খাইয়ে পাগল বানিয়েছেন রবীন্দ্রনাথ। যেটি ছিল মিথ্যাচার।
১৯৪২ সালে নজরুল নির্বাক হওয়ার পেছনের দায়ও রবীন্দ্রনাথের। অবশ্য রবীন্দ্রনাথ তার আগেই, অর্থাৎ ১৯৪১ সালে স্বর্গবাসী হয়েছেন। আরেকটি গুজব এইরকম—নজরুলেরই নোবেল পাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু নজরুলকে উন্মাদ বানিয়ে, ব্রিটিশদের বাগিয়ে নোবেল কেড়ে নিয়েছেন রবীন্দ্রনাথ। অথচ নোবেল প্রাপ্তির বছর—১৯১৩ সালে নজরুলের বয়স ছিল বড়জোর ১৪!
চৌদ্দ বছরের ‘প্রতিভাবান বালক’টি কোন প্রতিভা বলে কোন অবদানের জন্য নোবেল পাবেন—সেই বিষয়ে গুজব খেকো বাঙালির কোনো ব্যাখ্যা নেই। তাছাড়া নজরুল তখনো নির্বাক হননি। এইসব কৌতুককর রবীন্দ্র-গুজবের বাইরে বাঙালির আরও আরও মাথা ব্যথা আছে। বাংলা ও বাঙালির রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক ইতিহাস বোঝার ক্ষেত্রে ওইসব আলাপ জরুরি।
বিপুলসংখ্যক বাঙালির ধারণা—ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার সময় বিরোধিতা করেছিলেন রবীন্দ্রনাথ; যার বস্তুনিষ্ঠ প্রমাণ আজ পর্যন্ত কেউ দিতে পেরেছেন বলে শুনিনি। অনেকের প্রশ্ন, রবীন্দ্রনাথ কেন মুসলমানের জীবন নিয়ে লেখেননি? ‘হিন্দু’ রবীন্দ্রনাথের গান কেন সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলমানের রাষ্ট্র—বাংলাদেশে জাতীয় সংগীত করা হলো?
- ট্যাগ:
- মতামত
- গুজব
- বিতর্কিত
- মিথ্যাচার
- রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর