আওয়ামী লীগ কেন বিএনপির সঙ্গে সংলাপে বসবে
নির্বাচন কমিশন যে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপ শুরু করেছে, তাতে আশার চেয়ে হতাশার কথাই বেশি শোনা যাচ্ছে। প্রধান বিরোধী দল বিএনপি আগেই জানিয়ে দিয়েছিল, তারা নির্বাচন কমিশন আহূত সংলাপে যাবে না। নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনই তাদের দাবি। এর বাইরে কিছু তারা মানবে না। বিএনপির কয়েকটি মিত্র দলও একই অবস্থান নিয়েছে বলে জানা গেছে।
বিএনপি সংলাপে না গিয়েও প্রবলভাবে উপস্থিত। প্রতিদিনের আলোচনায় বিএনপির প্রসঙ্গ আসছেই। সিইসি কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেছেন, বিএনপির মতো বড় দল নির্বাচনে না এলে নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক হবে না। নির্বাচন নিয়ে সৃষ্ট বিরোধ মীমাংসায় তিনি পরস্পর বিপরীত অবস্থানে থাকা আওয়ামী লীগ ও বিএনপিকে আলোচনায় বসারও পরামর্শ দিয়েছেন। একই সঙ্গে এ কথাও জানিয়ে দিয়েছেন, দুই দলকে বসানোর বিষয়ে নির্বাচন কমিশনের কিছু করণীয় নেই।
এর আগে সিইসি মাঠ ছেড়ে না দিয়ে তলোয়ারের বিরুদ্ধে তলোয়ার বা রাইফেল নিয়ে প্রস্তুত থাকতে বলেছেন, যা নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রচুর সমালোচনা হয়েছে। প্রশ্ন উঠেছে, সিইসি কাউকে তলোয়ার ও রাইফেল নিয়ে প্রস্তুত থাকতে বলতে পারেন কি না। পরে সিইসি তাঁর বক্তব্যের ব্যাখ্যা দিয়ে বলেছেন, তিনি তলোয়ার ও রাইফেলের প্রসঙ্গটি বলেছেন কৌতুক করে। এটি ‘মিন’ করেননি। সিইসির এই বক্তব্যে যে নির্মম সত্যটি বেরিয়ে এসেছে তা হলো, নির্বাচনের নামে দেশে শক্তি পরীক্ষার মহড়া চলেছে। নির্বাচন কমিশন যদি সত্যিই একটি সুষ্ঠু, গ্রহণযোগ্য নির্বাচন করতে চায়, প্রথমে তাদের কর্তব্য হবে নির্বাচনী মাঠকে তলোয়ারমুক্ত করা। বিএনপি বা অন্য দল মাঠ ছেড়ে দিলেও সন্ত্রাস ও হানাহানি বন্ধ হয়নি, তার প্রমাণ গত বছর অনুষ্ঠিত ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন।
প্রথম আলোর খবর অনুযায়ী, গত ৫ মাসে নির্বাচনী সংঘাত ও হানাহানিতে সারা দেশে ৯৫ জন নিহত হয়েছেন। সবচেয়ে বেশি মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে দ্বিতীয় ও তৃতীয় ধাপের নির্বাচনে। এই দুই ধাপে যথাক্রমে ৩০ ও ২৬ জন নিহত হয়েছেন। প্রথম ধাপে দুই ভাগে নির্বাচন হয়েছে। দ্বিতীয় ভাগের নির্বাচন হয়েছে গত সেপ্টেম্বর মাসে। মূলত তখন থেকেই সারা দেশে নির্বাচন ঘিরে সংঘাতময় পরিস্থিতি দেখা দেয়। প্রথম ধাপে ৫ জন, চতুর্থ ধাপে ১০, পঞ্চম ধাপে ২৩ ও ষষ্ঠ ধাপের ইউপি নির্বাচন ঘিরে সহিংসতায় এখন পর্যন্ত একজনের মৃত্যু হয়েছে। (প্রথম আলো, ৩০ জানুয়ারি ২০২২)
সিইসি কী বলেছেন, তার চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো তারা কী করেছে। কীভাবে তারা নির্বাচনটি করতে চাইছে? বর্তমান নির্বাচন কমিশন দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে নানা ধরনের তৎপরতা চালাচ্ছে। তারা পেশাজীবীদের সঙ্গে আলোচনা করেছে। সাবেক সিইসি ও নির্বাচন কমিশনারদের সঙ্গে কথা বলেছে। নিজেদের দাবি দাওয়া জানাচ্ছে। কিন্তু বাংলাদেশের রাজনৈতিক সংস্কৃতি হলো, আলোচনার বদলে সবকিছু তারা রাজপথে ফয়সালা করতে চায়।