কী যাতনা বিষে বুঝিবে সে কিসে

www.ajkerpatrika.com সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী প্রকাশিত: ১৩ জুলাই ২০২২, ২০:০৮

না, বুঝবে না, একের বেদনা অপরের পক্ষে বোঝা কোনো দিনই সহজ ছিল না; কিন্তু এখন এই পরিবর্তিত বিশ্বে সেটা আরও কঠিন হয়ে পড়েছে। বড় কারণ বিচ্ছিন্নতার বৃদ্ধি। বিশ্বজুড়েই এখন মানুষ তার সামাজিক সত্তাকে অবজ্ঞা করতে উৎসাহিত হচ্ছে। উৎসাহিত করছে শুধু ব্যক্তি নয়, আসলে গোটা ব্যবস্থাটাই। ব্যবস্থাটাই বলছে, বাঁচতে হলে নিজেরটা দেখো। নিজে বাঁচলে বাপের নাম।



ওই যে বাংলা প্রবচন, ‘কী যাতনা বিষে বুঝিবে সে কিসে/কভু আশীবিষে দংশেনি যারে?’ তাতে তো এটা ধরে নেওয়া হয়েছে যে ব্যথিতরাই কেবল ব্যথিতের বেদনা বুঝবে; কালের অগ্রগতিতে এবং সভ্যতার উন্নতিতে ওই আশাতেও এখন বিস্তর বালু পড়েছে। ব্যথিতের সংখ্যা বেড়েছে। প্রত্যেকেই এখন ব্যথিত, কে কার অশ্রু মোছায়? অথচ পৃথিবীতে এখন আগের যেকোনো সময়ের তুলনায় প্রাচুর্য অধিক। কোথাও কোথাও তা উপচে পড়ছে। বাংলা প্রবচনটিতে সাপের বিষের উল্লেখ আছে। তা সাপ একসময় ভয়ংকর ছিল বৈকি, তার দংশন কেবল যে দুঃসহ ছিল তা নয়, দংশন এড়ানোও খুব সহজ ছিল না। এখন সাপ কমেছে, কিন্তু বিষের প্রাচুর্য অনেক অনেক গুণ বেড়ে গেছে। খাদ্য, বাতাস, পানি, মাটি, মানবিক সম্পর্ক—সবকিছুতেই বিষ রয়েছে জড়িয়ে-ছড়িয়ে। বিষের হাত থেকে বাঁচাটা সহজ নয়। দংশিত হলে চিকিৎসা হয়তো পাওয়া যাবে, তবে সমবেদনা পাওয়া কঠিন। সবকিছুই তো এখন পণ্যে পরিণত, সমবেদনাও কিনতে পাওয়া যায়, কিন্তু সে জিনিস খাঁটি নয়, ভেজাল বটে।



সবচেয়ে ভয়ংকর বিষের নাম হচ্ছে হতাশা। গোপনে গোপনে ছড়িয়ে পড়ে, ক্রমেই প্রবল হয়ে কাবু করে, ঠেলে দিতে পারে আত্মহত্যার দিকে। সবকিছুতে আস্থা হারানোটাও একধরনের আত্মহত্যাই। মানসিক আত্মহত্যা। পরবর্তী ও চরম স্তরটা হচ্ছে আত্মহনন, দৈহিকভাবে। যেসব সমাজে সামাজিক নিরাপত্তা রয়েছে, সেখানেও দেখা যায় বিস্তর লোক আত্মহত্যা করে। যেমন সুইডেনে, জাপানে। তাদের মনেও হতাশা দেখা দেয়, তারা সৃষ্টিশীল কাজ পায় না খুঁজে। জীবন মনে হয় অর্থহীন, একঘেয়ে, ক্লান্তিকর। আশা নেই পরিবর্তনের। জীবনের বোঝা বহন করাটা দুঃসাধ্য হয়ে পড়ে। সহানুভূতি জানাবে এমন লোক পাওয়া যায় না। এটাও পুঁজিবাদী উন্নয়নের অবদান বৈকি।



বাংলাদেশেও বেশ ভালো রকমের উন্নতি হচ্ছে, তবে সেই উন্নতি অধিকাংশ মানুষকেই ভরসা দিচ্ছে না, হতাশা বাড়াচ্ছে। নিজেকে একাকী, নিঃসঙ্গ মনে হচ্ছে। ভবিষ্যতের কোনো আলো দেখা যাচ্ছে না। হতাশা বিশেষভাবে ভর করেছে কিশোর-কিশোরীদের ঘাড়ে। করোনা ব্যাপক হারে আঘাত করেছে গরিব মানুষকে তো বটেই, তরুণদেরও। তাদের মধ্যে মারাত্মক হতাশা দেখা দিয়েছে। কেউ কেউ আত্মহত্যা পর্যন্ত করছে। যেমন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রীটি। সাদিয়া তাবাসসুম নাম। বাড়ি ময়মনসিংহে। বাবা সেনাবাহিনীতে ছিলেন। এখন অবসরপ্রাপ্ত। সাদিয়ার মা সেদিন ঘরে ছিলেন না। বাবা গিয়েছিলেন একজনের জানাজায়। এই ফাঁকে সবাইকে ফাঁকি দিয়ে ঘরের আড়ার সঙ্গে নিজেকে ঝুলিয়ে দিয়ে জীবনটাকে শেষ করে দিয়েছে সাদিয়া। তার বাবার ডায়েরিতে সাদিয়ার নিজের হাতে লেখা পাওয়া গেছে, ‘চোরাবালির মতো ডিপ্রেশন বেড়েই যাচ্ছে। মুক্তির পথ নাই। গ্রাস করে নিচ্ছে জীবন। মেনে নিতে পারছি না।’ অসহায় এক তরুণীর করুণ আর্তনাদ।

সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ুন

প্রতিদিন ৩৫০০+ সংবাদ পড়ুন প্রিয়-তে

আরও