মানুষ মানুষের জন্য
সীতাকুণ্ড অগ্নিকাণ্ডের শোক না সামলাতেই বন্যা বৃহত্তর সিলেটসহ দেশের বেশকিছু এলাকা বন্যা শুধু পানিতে নয় বেদনার ঢেউয়ের চাদর দিয়ে ঢেকে ফেলেছে। মানুষ এখন চরম বিপদগ্রস্ত। খাবার নেই, পানি নেই, পরনের কাপড় নেই। আছে শুধুই হাহাকার। এই হাহাকারের মধ্যে খুব নীরবে একটি ব্যাপার ঘটছে, তা কেউ লক্ষ্য করেছেন কি না জানি না।
এত বড় মানবিক বিপর্যয়ে যেসব বড় বড় কর্পোরেট প্রতিষ্ঠান, কিংবা যাদের উপদেশ আমরা সব বিষয়ে শুনি তারা তেমন কেউ এগিয়ে আসেননি, এগিয়ে এসেছে যাদের কিছু নেই সেই তরুণ সমাজ।
এরা কিংবা এদের বিভিন্ন সংগঠন সোশ্যাল মিডিয়ায় বন্যার্তদের সাহায্য করার জন্য বিভিন্ন ইভেন্ট/প্ল্যাটফর্ম খুলেছেন এবং সাধারণ মানুষের কাছ থেকে অবিশ্বাস্য সাড়া পাচ্ছেন। অর্থাৎ মানবিকতার নেতৃত্ব যাদের সাথে থাকা উচিত ছিল তারা তা ধারণ না করায় পতাকা হাতবদল হয়ে তরুণদের হাতে চলে যাচ্ছে। তারুণ্যের এই বিজয় অবশ্যই আনন্দদায়ক, কিন্তু সামর্থ্যবানদের অক্ষম নিস্তব্ধতা তারচেয়ে বেশি দুঃখজনক।
বছর দশেক আগেও আমরা দেখতাম জাতীয় দুর্যোগে বড় বড় প্রতিষ্ঠান, ব্যক্তি ঝাঁপিয়ে পড়েছেন, তরুণেরা তাদের পেছনে কাজ করতেন। এখন দেখছি সেসব বড় প্রতিষ্ঠান বা ব্যক্তি উট পাখি হয়ে গেছেন। তারা এই মহাদুর্যোগ অস্বীকার করে মাটিতে মুখ গুঁজে আছেন, আর তরুণেরা নেমেছে উদ্ধারকারী ঈগলের ভূমিকায়। অন্তত এখন পর্যন্ত আমার অভিজ্ঞতা বলে, যে পরিমাণ সাড়া এসব উটপাখির দেওয়া উচিত ছিল তারা তা দেননি। (দুয়েকজন ব্যতিক্রম বাদে—তাদের প্রতি শ্রদ্ধা)
অতি বিস্ময়ের সাথে আমার মনে যে প্রশ্ন জাগে তাহলো, আমাদের দেশে বিভিন্ন ইভেন্ট স্পন্সর করার জন্য অনেক প্রতিষ্ঠান কোটি কোটি টাকা খরচ করেন তারা এই মহাদুর্যোগে কোথায়?
স্পোর্টস ইভেন্টে খেলোয়াড়দের জার্সিতে নাম লেখানোর জন্য শতকোটি টাকা নিয়ে যারা লাইন ধরেন তাদের কাছে কি বিপন্ন মানুষের কোনো মূল্য নেই? ব্যক্তিগত অনুষ্ঠানে গান গাওয়ার জন্য কোটি টাকা খরচ করে যারা বিদেশ থেকে শিল্পী উড়িয়ে আনেন তারা ঘুমাচ্ছেন কীভাবে?
- ট্যাগ:
- মতামত
- মানবিক সহায়তা