দুর্যোগ মোকাবেলায় আমরা কতটুকু প্রস্তুত
প্রাকৃতিক দুর্যোগ এখন যেন আমাদের নিত্যসঙ্গী। জলবায়ুর পরিবর্তনের কারণে আবহাওয়াসংক্রান্ত দুর্যোগের ঘটনার পরিমাণ ও তীব্রতা বাড়ছে। বাংলাদেশে বিভিন্ন সময়ে বড় বড় দুর্যোগে অনেক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। যেমন ১৯৮৮ সালের বন্যায় প্রায় এক কোটি লোক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল।
২০০৭ সালের বন্যা ও নদীভাঙনে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল প্রায় সোয়া কোটি মানুষ। ক্ষেতের ফসল, বাড়িঘর, গবাদি পশু, গাছপালা—সবই ধ্বংস হয়ে যায়। ভেঙে পড়ে দেশের কৃষিনির্ভর অর্থনীতি। ১৯৯১ সালে চট্টগ্রাম, কক্সবাজার সমুদ্র উপকূলে প্রাণ হারায় প্রায় দেড় লাখ মানুষ। বন্যা ও ঘূর্ণিঝড়ে বাংলাদেশে প্রতিবছর ৩২০ কোটি ডলার বা ২৫ হাজার ৬০০ কোটি টাকার ক্ষতি হয়, যা মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) ২.২ শতাংশ।
চলতি শতকের ২০ বছরে বিশ্বের যে ১০টি দেশ সবচেয়ে বেশি দুর্যোগে আক্রান্ত হয়েছে, সেগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ নবম। যখন এই লেখাটি লিখছি, তখন সিলেট, সুনামগঞ্জসহ দেশের বিভিন্ন স্থান ভয়াবহ বন্যায় আক্রান্ত। অসংখ্য মানুষ বিপত্সীমায়। সরকারি ও বেসরকারিভাবে অনেকেই ত্রাণ তৎপরতায় যুক্ত হয়েছেন। বন্যাকবলিত এসব মানুষের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করাই এখন সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখা দিয়েছে। নিম্ন আয়ের মানুষ বা যারা দিন আনে দিন খায় তারা সবচেয়ে বেশি সমস্যায় পড়েছে এই বন্যার প্রভাবে।
এমন ধরনের দুর্যোগ মোকাবেলায় সবচেয়ে বড় সমস্যা হচ্ছে দেশের মোট জনগোষ্ঠীর কোনো সুনির্দিষ্ট ডাটাবেইস নেই। মোট জনসংখ্যার পেশা, বয়স, আয়, পারিবারিক নির্ভরশীলতা প্রভৃতি বিবেচনায় নির্দিষ্ট একটি ডাটাবেইস দেশের যেকোনো দুর্যোগ মোকাবেলায় কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে। বিশেষ করে কতসংখ্যক মানুষ চাকরিজীবী (পেশাভিত্তিক আলাদা), গাড়িচালক, রিকশাচালক, চায়ের দোকানদার, ফুটপাতের হকার, কৃষক-শ্রমিক, কুলি, মজুর, পোশাক কারখানার কর্মী, মিল-কারখানার কর্মী, ব্যবসায়ী (ধরন অনুযায়ী) প্রভৃতির যথাযথ তালিকা কিংবা ডাটাবেইস আজ পর্যন্তও তৈরি করা সম্ভব হয়নি। হয়তো এ বিষয়ে পরিসংখ্যান আছে, কিন্তু পরিসংখ্যান আর ডাটাবেইস এক নয়। পরিসংখ্যানের ভিত্তিতে কোনো কিছু অনুমান করা যায়। তবে ডাটাবেইসের ভিত্তিতে যেভাবে সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপ গ্রহণ করা সম্ভব, সেটি তথাকথিত পরিসংখ্যানের ভিত্তিতে সম্ভব নয়।