নির্বাচন নিয়ে সংস্কার ও চর্চার সুপারিশ
আমাদের প্রতিনিধিত্বশীল প্রতিষ্ঠান, গণতন্ত্রের প্রয়োগ পদ্ধতি ও নির্বাচন ব্যবস্থার গলদ বা সীমাবদ্ধতা এক জায়গায় নয়; এর বিস্তার বহুমুখী। 'মেজরেটারিয়ান' পদ্ধতি যাকে ইংরেজিতে 'ফার্স্ট পাস্ট দ্য পোস্ট' ব্যবস্থা বলা হয়। তার নানা অসুবিধা সত্ত্বেও আমরা এতে আটকে আছি প্রায় শতাব্দীকাল। নানা দেশে আজকাল এ ব্যবস্থাকে পরিত্যাগ করে ধীরে ধীরে 'সমানুপাতিক প্রতিনিধিত্ব' ব্যবস্থাকে সাদরে গ্রহণ করা হচ্ছে। তাতে প্রতিটি ভোট মূল্যায়িত হয়।
আমাদের ব্যবস্থায় স্রেফ তথাকথিত সংখ্যাগরিষ্ঠতাপ্রাপ্তরা সবকিছুর মালিক হয়ে যান এবং অন্যান্য ভোট 'নষ্ট ভোট' হিসেবে গণ্য হয়ে যায়। সম্প্রতি অনুষ্ঠিত কুসিক নির্বাচনে নির্বাচিত মেয়রের প্রাপ্ত ভোট মোট নিবন্ধিত ভোটের ২১ দশমিক ৮ শতাংশ এবং প্রদত্ত ভোটের ৩৭ দশমিক ২ শতাংশ। অন্যদিকে সম্মিলিতভাবে অপর চার প্রার্থী মোট নিবন্ধিত ভোটের ৩৬ দশমিক ৭ শতাংশ এবং প্রদত্ত ভোটের ৬২ শতাংশ পেয়েছেন। কিন্তু আমাদের অনুসরণকৃত বর্তমান ব্যবস্থায় আমরা সহজ বা সিম্পল মেজরিটি নীতি গ্রহণ করার কারণে সবসময়ই সংখ্যালঘিষ্ঠের শাসন মেনে নিতে বাধ্য হচ্ছি। ৩০০ আসনের নির্বাচনে প্রায়ই দেখা যায়, কোনো দল সংখ্যাগরিষ্ঠ আসন পেয়ে দেশ শাসনের অধিকার লাভ করেছে। কিন্তু দেশের মোট প্রদত্ত ও প্রাপ্ত ভোট হিসাব করে দেখা গেছে, সংখ্যাগরিষ্ঠ ভোটপ্রাপ্তরা ক্ষমতার বাইরে এবং সংখ্যালঘিষ্ঠরা দেশ শাসন করছে। তাই প্রতিটি ভোটকে যদি গুরুত্ব দিতে হয় তাহলে 'সমানুপাতিক প্রতিনিধিত্ব'র নির্বাচন পদ্ধতির বিকল্প নেই।
২. নির্বাচনের মাধ্যমে যে জাতীয় সংসদ গঠিত হয় এর সীমাবদ্ধতা বহুবিধ। যেসব দেশে কার্যকর সংসদ রয়েছে তাদের সবার সংসদ দ্বিকক্ষবিশিষ্ট। আমাদের সংসদীয় ব্যবস্থা এক কক্ষবিশিষ্ট। ফলে এখানে বিশেষায়িত বিতর্কের অবকাশ সীমিত। নিম্নকক্ষের সীমাবদ্ধতাকে অতিক্রম করা বা ভারসাম্য রক্ষার জন্য উচ্চকক্ষ প্রয়োজন, যা এ দেশে অনুপস্থিত। অন্যদিকে স্থানীয় সরকার কাঠামোও ত্রুটিযুক্ত। এখানে নির্বাচিত এক ব্যক্তি তথা চেয়ারম্যান ও মেয়রের শাসন। সংসদীয় যৌথ নেতৃত্ব নেই। তাই নির্বাচন করেও গণতন্ত্রের সুফল পাওয়া যায় না।