অর্থ পাচার নিয়ে ভুল বার্তা
গত বছর নভেম্বর মাসে সংসদে দাঁড়িয়ে অর্থমন্ত্রী বলেছিলেন, দেশ থেকে কারা অর্থ পাচার করেন, তিনি তা জানেন না। তাঁর এ বক্তব্য তখন অনেক সমালোচনার জন্ম দিয়েছিল। অর্থমন্ত্রী তাঁর সেই বক্তব্যের ছয় মাস পরেই জাতীয় সংসদে বাজেটে পাচারকৃত অর্থ দেশে ফিরিয়ে আনতে নতুন নিয়মের কথা ঘোষণা করলেন। এই সময়ে সাংবাদিকরা বাংলাদেশ থেকে অর্থ পাচারে 'জিএফআই' প্রতিবেদন নিয়ে প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, প্রতি বছর দেশ থেকে ৬৪ হাজার কোটি টাকা কেন; ৬৪ টাকা পাচারের হিসাব আছে কিনা, আমাকে দেন।' তিনি আবারও সেই একই কাজ করলেন! দেশের একজন দায়িত্বশীল ব্যক্তির কথা-কাজের এমন অসংগতি ও স্ববিরোধিতা সত্যিই বিস্ময়ের।
বাজেট বক্তৃতায় অর্থমন্ত্রী বলেন, বিদেশে স্থাবর সম্পত্তি থাকলে দেশের আয়কর রিটার্নে দেখাতে চাইলে ১৫ শতাংশ আয়কর দিতে হবে। এ ছাড়া অস্থাবর সম্পত্তির ওপর ১০ শতাংশ এবং পাচার হওয়া টাকা দেশে আনলে সেই টাকার ওপর ৭ শতাংশ কর দিয়ে আয়কর রিটার্নে দেখাতে পারবেন যে কেউ। এ বিষয়ে আইনগত ব্যবস্থা নেবে না সরকার। তাঁকে কোনো প্রশ্ন করা হবে না।
গত মাসে দেশের অন্যতম বৃহৎ অর্থ পাচারকারী পি কে হালদার ভারতে গ্রেপ্তার হন। যাঁর বিরুদ্ধে কয়েক হাজার কোটি টাকা আত্মসাৎ ও পাচারের অভিযোগ আছে; তিনি যদি গত মাসে গ্রেপ্তার না হতেন তাহলে তিনিও এ সুযোগ পেতেন এবং সম্মানের সঙ্গে দেশে আসতে পারতেন। তাঁকে নিয়ে কোনো কথা হতো না। কী দুর্ভাগ্য তাঁর!
১০ শতাংশ কর দেওয়ার মাধ্যমে সরকার কালো টাকাকে সাদা করার সুযোগ দিয়েছিল। ১৮ বার এ সুযোগ দেওয়ার পরও খুব ফল পাওয়া যায়নি। পাচারকৃত অর্থ ফেরত আনার ক্ষেত্রে ভিন্ন কিছু ঘটবে- তার কোনো নিশ্চয়তা নেই। আর সুফল না পাওয়া গেলে তা দেশের আর্থিক খাতের জন্য একটি বাজে উদাহরণ হবে এবং পাচারকারীদের এই সুযোগদান দেশের সৎ উদ্যোক্তা ও করদাতাদের জন্য হবে চপেটাঘাত। একে অপরাধের দায়মুক্তি বললে ভুল বলা হবে না।