বাজেটে সবার জন্য উন্নয়নের পথনকশা
একটি নির্দিষ্ট সময়ে ক খ গ ঘ চার জনের মাথাপিছু আয় ২৫ টাকা। এটা তাদের যার যার পুঁজি। ক পরিশ্রম করে সম্পদ সৃষ্টি করে তার পুঁজি ৩৫ টাকায় উন্নীত করল। খ কিছুই না করতে না পেরে তার পুঁজি নিয়ে ঠায় অলস বসে থাকল। সময়ের অবসরে মূল্যস্ফীতির কারণে তার ২৫ টাকার উপযোগিতা কমে ২৩ টাকায় নামল। গ, ক ও ঘ এর কাছ থেকে ৫+৫=১০ টাকা ছিনিয়ে নিল। কোনো পরিশ্রম, বিনিয়োগ কিংবা সম্পদ সৃষ্টি ছাড়াই গ এর পুঁজি ৩৫ টাকায় পৌঁছাল, আর বেচারা ঘ এর পুঁজি কমে ২০ টাকায় এবং ক এর ৩০ টাকায় নামল। সমান পুঁজিধারী ক খ গ ঘ এর পুঁজি একটি সময় অন্তে যথাক্রমে ৩০, ২৩, ৩৫ এবং ২০ টাকায় দাঁড়াল। চার জনের মোট সম্পদ এখন ১০৮ টাকা। মাথাপিছু ২ টাকা বৃদ্ধি পেয়ে ২৭ টাকা। ক পরিশ্রম করে যে সম্পদ তৈরি করল তা বিনাশ্রমে অবৈধভাবে অর্থউপার্জনকারী ও আয়বৈষম্য সৃষ্টিকারী গ বেশি দামে জিনিস কিনে ক, খ ও ঘ এর জন্য জীবনযাপন কঠিন করে তুলল। মাথাপিছু আয় ২টাকা বৃদ্ধি পেলেও গ ক, খ ও ঘ-কে দিব্বি পেছনে ফেলে দিল, খ ও ঘ গড় আয়ের হিস্যা থেকে ৪ ও ৭ টাকা হারিয়ে দরিদ্র হয়ে গেল। যে অর্থনীতিতে ক নিরাপদ নয় উপার্জনে গ এর অত্যাচারে, খ ও ঘ এর ক্রয়ক্ষমতা কমে যাওয়ায় তারা অসহায়ত্বের শিকার, সে অর্থনীতিতে গ এর দৌরাত্ম্য বাড়া মানে খ ও ঘ এর আরও দরিদ্র হওয়া। পেছনে পড়া। সুতরাং সংখ্যার মারপ্যাঁচে মাথাপিছু আয় বাড়া মানে সবার সমানতালে বৃদ্ধি পাওয়া তো নয়ই বরং দেখার বিষয় কারও কারও কারসাজিতে কেউ কেউ পিছিয়ে পড়েছে কি-না। অনেককে পেছনে ফেলে কারও অধিক এগিয়ে যাওয়ার পরিসংখ্যানগত প্রবৃদ্ধি বা উন্নয়ন অর্থবহ হয় না।
এটা মানতেই হবে যেকোনো যৌথ সংসারে কিংবা কায়কারবারে সবার আয় উন্নতির সমান সুযোগ নিশিচত না হলে, ন্যয়নীতিনির্ভর কর্তব্যপালনে দৃঢ়চিত্ত প্রত্যয় না থাকলে, সুচিন্তিত মতামত প্রকাশের সমান সুযোগ না থাকলে, অনেককেই পেছনে ফেলা হবে। যেকোনো উন্নয়ন উদ্দেশ্য অর্জন তথা অভীষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছানোয় ঐকান্তিক প্রয়াসে সবার সমর্পিতচিত্ত ও স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণের ক্ষেত্রে পারস্পরিক আস্থা যেমন জরুরি, জাতীয় উন্নয়ন প্রয়াস প্রচেষ্টাতেও সমন্বিত উদ্যোগের আবশ্যকতাও একইভাবে অনস্বীকার্য। জাতীয় সঞ্চয় ও বিনিয়োগে থাকা চাই প্রতিটি নাগরিকের ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র অবদান এবং তার ন্যয্য স্বীকৃতি। অপচয় অপব্যয় রোধ, লাগসই প্রযুক্তি ও কার্যকর ব্যবস্থা অবলম্বনের দ্বারা সীমিত সম্পদের সুষম ব্যবহার নিশ্চিতকরণে সবার মধ্যে অভ্যাস, আগ্রহ, নিষ্ঠা ও একাগ্রতার সংস্কৃতি গড়ে ওঠা দরকার। নাগরিক অধিকার সম্পর্কে সচেতনতা ও উপলদ্ধির জাগৃতিতে অনিবার্য হয়ে উঠে যে নিষ্ঠা ও আকাক্সক্ষা, তা অর্জনের জন্য সাধনার প্রয়োজন, প্রয়োজন ত্যাগ স্বীকারের। দায়দায়িত্ব পালন ছাড়া স্বাধীনতার সুফল ভোগের দাবিদার হওয়া বাতুলতা মাত্র। ‘ফেল কড়ি মাখ তেল’ কথাটি এ ক্ষেত্রে বিশেষভাবে প্রযোজ্য এ জন্য যে উৎপাদনে সক্রিয় অংশগ্রহণ না করেই ফসলের ন্যায্য অধিকার প্রত্যাশী হওয়া স্বাভাবিক এবং সংগত কর্ম ও ধর্ম নয়।