গর্ব খর্বের পথে ছাত্র ও ছাত্রলীগ
‘ছাত্র’র মতো এত আশা জাগানিয়া শব্দ আমার এই মুহূর্তে আর মনে পড়ছে না। বিশ্বজুড়ে এই ছাত্রদের লালনই করা হয়। একদিন কিছু বদল দিতে পারে এই ছাত্র সমাজই। এনে দিতে পারে স্বাধীন দেশ। ছাত্ররা মহামূল্যবান এক সম্পদ। রাজনীতির কঠিন অঙ্কের সমাধান দিতে পারে ছাত্ররা।
বিশ্বজুড়েই একসময় একটা অত্যন্ত সুসংগঠিত শক্তি ছিল ছাত্রসমাজ। দুনিয়ার তারুণ্যের এক শক্তিশালী সত্তা ছাত্ররা। বাংলাদেশের ছাত্ররাজনীতির ইতিহাস অনেক বেশি শক্তিশালী এবং বর্ণাঢ্য। উনিশ শতকের গোড়ার দিকেই ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনের অগ্রভাগে ছিল এই ছাত্ররা। আসলে আমাদের ছাত্র আন্দোলনের কথা বলতে গেলে কয়েক লাখ ফর্মায়ও তা শেষ করা যাবে না। ভাষা আন্দোলনের কৃতিত্বও ছাত্রদের হাতেই তুলে দিতে হবে। আর ১৯৭১-এর মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম শক্তিও ছাত্ররা। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সেই সময় এই ছাত্রদের নিয়েই পাকিস্তানের পতাকা সরিয়ে স্বাধীন দেশের পতাকা উড়িয়েছেন।
বঙ্গবন্ধু নিজেও উঠে এসেছিলেন ছাত্ররাজনীতি থেকেই। মুসলিম লীগ, আওয়ামী মুসলিম লীগ এবং এরপর তিনি প্রতিষ্ঠা করেন ‘ছাত্রলীগ’। সেই ছাত্রলীগের এমন বর্ণাঢ্য ইতিহাস তা বলে শেষ করা যাবে না। চল্লিশের দশকের পরেই বাংলার ছাত্র সংগঠনগুলো একটি স্বাধীন দেশের জন্য নিজেদের আন্দোলন-সংগ্রামের তাগিদ অনুভব করেন। নীতিনির্ধারক বড় নেতাদের সঙ্গে তাদের যোগাযোগ ছিল একেবারেই আত্মিক। সে-সময়ের নীতিনির্ধারক শেরে বাংলা একে ফজলুল হক, হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী এবং শেখ মুজিবুর রহমান তারাও জানতেন পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে হলে এই ছাত্রদের মধ্যেই দেশপ্রেম এবং স্বাধীনতার বীজ বপন করতে হবে। শেরেবাংলা বলতেন, ছাত্রদের মাথা পরিষ্কার। তাদের ধরিয়ে দিলে অনেক দূর পর্যন্ত তারা এর পরিধি দেখতে পায়। বঙ্গবন্ধু ছাত্রলীগ প্রতিষ্ঠা করেন। কারণ তিনি মনে করেছেন, স্বপ্নের স্বাধীন দেশ পেতে হলে বুক চিতিয়ে দেওয়ার মতো শক্তি আছে ছাত্ররাই। দেশব্যাপী তিনি প্রতিটি প্রতিষ্ঠানে ছাত্রলীগের কমিটি গঠন করেছিলেন। সেই সময়ে মেধাবী এবং পড়ুয়া ছাত্ররা ছাত্ররাজনীতি করতেন। আর সেটার সুফল আমরা পাই বাহান্নর ভাষা আন্দোলনের পর থেকে ৭১ সাল পর্যন্ত সব কটি আন্দোলনে। অন্যান্য প্রগতিশীল ছাত্র সংগঠনগুলোও সে সময় স্বাধীনতার পক্ষে কাজ করেছে। কোনো কোনো রাজনৈতিক দলের ভুল নির্দেশনার কারণে কিছু ছাত্র সংগঠন বা কিছু ছাত্রনেতা নেতিবাচক ভূমিকা রেখেছেন বটে। আর যাই হোক সেই সময় বিরোধীপক্ষের ছাত্র সংগঠনের কাউকেই ইট হাতে নিয়ে মাথা থেঁতলে দেওয়ার মতো ঘটনায় অংশ নিতে দেখা যায়নি। বোনের মায়ের নারীর সম্ভ্রম ছাত্রদের কাছে এক মহান পবিত্রতায় আসীন ছিল। ছাত্ররা ধর্ষণ করবে এটা মনে হতো হয়তো জাহান্নাম হয়ে যাওয়ার আগের মুহূর্তে হতে পারে।