জৈব কৃষি নিয়ে লংকান কাণ্ড

বণিক বার্তা মোহাম্মদ নাজিম উদ্দিন খান প্রকাশিত: ২৮ মে ২০২২, ০৭:৩৮

এ সময়ে দ্বীপরাষ্ট্র ও একসময় কৃষিতে সমৃদ্ধ দক্ষিণ এশিয়ার সবচেয়ে অগ্রসর অর্থনীতির দেশ শ্রীলংকাকে নিয়ে বিশ্বব্যাপী সচেতন মহল উদ্বিগ্ন। কিছুদিন আগেও সামাজিক সূচকে শ্রীলংকা ছিল এ অঞ্চলের সেরা। শিক্ষার গুণাগুণেও ছিল সবচেয়ে এগিয়ে। দক্ষিণ এশিয়ায় পোশাক খাতের রফতানি প্রথম শুরু হয়েছিল এ শ্রীলংকা থেকেই। আর পর্যটনের সেরা পছন্দ ছিল শ্রীলংকাই। এ সত্ত্বেও ধারণা করা হচ্ছে দেশটি খুব দ্রুত দেউলিয়াত্ব গ্রহণ করার দ্বারপ্রান্তে পৌঁছেছে। অনেক দিন ধরেই দেশটি পড়েছে ঋণের ফাঁদে। বিজ্ঞজনরা বলছেন, অতীতের দুর্নীতিগ্রস্ত রাজনীতিবিদ আর বর্তমানে রাজাপাকসে পরিবারের গোষ্ঠীতন্ত্র, খামখেয়ালিপূর্ণ সিদ্ধান্ত, ভুল নীতি, ভুল প্রকল্প বাছাই ও দুর্নীতির কারণেই শ্রীলংকা আজকের এ অবস্থানে। দেশটির এ দেউলিয়াত্ব ডেকে আনার জন্য করোনা মহামারীও কাল হয়ে দাঁড়িয়েছে। আবার অনুমিত ধারণাপ্রসূত রাতারাতি কৃষি খাতে ‘অর্গানিক ফার্মিং’ চালুর জন্য প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপাকসের একটি অপরিপক্ব সিদ্ধান্তকে সচেতন মহল দায়ী মনে করছে। এতে অর্গানিক ফার্মিং বা জৈব কৃষি নিয়ে একটি নেতিবাচক বার্তা তৈরি হয়েছে, যা বিশ্বব্যাপী সম্প্রসারণশীল পরিবেশগত চাষবাস বা অ্যাগ্রো ইকোলজিক্যাল ফার্মিং বা জৈব কৃষির অগ্রযাত্রাকে বাধাগ্রস্ত করতে পারে। অধিকন্তু, বর্তমান অস্বাস্থ্যকর খাদ্য ব্যবস্থা রূপান্তরের সঙ্গে যুক্ত সবাইকে নানা প্রশ্নের মুখোমুখি হতে হচ্ছে। এ নেতিবাচক প্রভাব মোকাবেলা ও জৈব কৃষির সম্ভাবনাকে তুলে ধরার জন্য শ্রীলংকার কৃষি খাতের পদক্ষেপটি নিয়ে মূল্যায়ন করা প্রয়োজন এবং সেজন্য দরকার দেশটির রাজনৈতিক, সামাজিক ও অর্থনৈতিক অবস্থার মূল্যায়ন করা।


শ্রীলংকায় কৃষির রূপান্তর: শ্রীলংকা ঐতিহ্যগতভাবে কৃষিনির্ভর দেশ। মানুষের প্রধান জীবিকা কৃষি। দেশটির উত্তর ও দক্ষিণাঞ্চলব্যাপী নদী উপত্যকা ঘেঁষে এ ব্যবস্থার উদ্ভব ও বিকাশ ঘটে। প্রাথমিক অবস্থায় বৃষ্টিনির্ভর কৃষি ছিল এবং ধানই ছিল প্রধান ফসল। এক মৌসুমে ধান উৎপাদন ও শুষ্ক মৌসুমে পতিত থাকত। ফসল উৎপাদন বৃদ্ধির ধারায় শ্রীলংকান সভ্যতার অন্যতম প্রধান বৈশিষ্ট্য হলো সেচ প্রযুক্তির বিকাশ এবং এভাবেই শ্রীলংকায় হাজার বছরের কৃষির উন্মেষ ঘটে। উনিশ শতক পর্যন্ত দেশটির কৃষি ছিল খোরপোশ প্রকৃতির। লংকান কৃষির বাণিজ্যিক ধারা শুরু হয় ওলন্দাজদের ১৭২২ সালে কফি প্রবর্তনের মাধ্যমে এবং লন্ডনে অব্যাহত চাহিদার দরুন ব্রিটিশ শাসকরা কফি চাষকে ব্যাপকভাবে উৎসাহিত করতে থাকেন। লংকান আবহাওয়া ও জলবায়ু প্লান্টেশন ফসল বা গাছজাতীয় ফসলের (ফল, সুপারি, কাজুবাদাম, রাবার, কফি, চা, কোকা, নারকেল প্রভৃতি) জন্য অত্যন্ত অনুকূল। ফলে সামগ্রিক প্লান্টেশন ফসলের আধিক্যে কফি চাষ কমে যায় এবং চা উৎপাদন তার স্থান দখল করে নেয়। নারকেল একসময় শুধু বসতবাড়িতে পাওয়া যেত। ১৯০০ সালে এসে নারকেলের চাহিদা বৃদ্ধির দরুন মোট কৃষিজমির ৪০ শতাংশ এর আওতায় চলে আসে। উনিশ শতকের শেষে এসে লংকান কৃষিতে প্লান্টেশন ফসলের আধিক্যে খাদ্যশস্য উৎপাদন একটু কম গুরুত্ব পায়। তবে শ্রীলংকায় খাদ্যশস্য উৎপাদন বৃদ্ধির তাড়না শুরু হয় স্বাধীনতার পর পরই। ডিএস সিরিসেনার সময়ে সরকার দানাদার ফসল ও সেচ ব্যবস্থার উন্নয়নে ব্যাপক কর্মসূচি গ্রহণ করে। আবার সে সময় বিশ্বব্যাপী সবুজ বিপ্লবের প্রস্তুতি চলছিল। সবুজ বিপ্লবের ধাক্কায় পৃথিবীর অন্যান্য দেশের মতোই শ্রীলংকার কৃষি ব্যবস্থায় প্রাকৃতিক উপকরণ নির্ভরতা থেকে রাসায়নিক ব্যবস্থায় পরিবর্তনের সূচনা হয় এবং তা করতে ব্যাপক ভর্তুকি দেয়া শুরু হয়। শ্রীলংকার কৃষি মৌসুম দুটি—মাহা (সেপ্টেম্বর- মার্চ) ও ইয়ালা (এপ্রিল থেকে আগস্ট)। এ দুই মৌসুমে দানাদার ফসল ও প্লান্টেশন ফসলের সংমিশ্রণে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের ৮০ শতাংশ মানুষের প্রধান উপায় হয়ে ওঠে কৃষি। শ্রীলংকার দানাদার ফসল প্রাপ্যতা বৃদ্ধির পাশাপাশি অর্থকরী ফসল হিসেবে চা দেশে ও বিদেশে বিশেষ জায়গা করে নেয়, যেমন পৃথিবীর ২৩ শতাংশ চা উৎপাদন করে শ্রীলংকা চতুর্থ স্থানে আছে। তা থেকে জিডিপির ২ শতাংশ জোগান পাওয়া যায়। ১ দশমিক ৩ বিলিয়ন ডলার আয় হয় এবং চা থেকে রফতানি আয়ে দ্বিতীয় স্থান অর্জনকারী দেশ। আবার ৮০ ধরনের সবজি ও ফল উৎপাদন হয়। একসময় তার মূলধারা ছিল একসঙ্গে একাধিক ফসলের আহরণ। নারকেল উৎপাদন ও রফতানিতে দেশটি চতুর্থ, মসলা ফসল বিশেষ করে এলাচি ও দারুচিনি উৎপাদনের তীর্থস্থান, ইন্নালা ও কিরি নামে কিছু মূলজাতীয় স্থানীয় ফসল পর্যাপ্ত হয়, তার সঙ্গে প্রচলিত ও অপ্রচলিত সবজি উৎপাদন করে দেশীয় চাহিদা মিটিয়ে রফতানি করা হয়। কৃষি উৎপাদন ধারা সচল রাখতে সরকার রাসায়নিক উপকরণে প্রণোদনা বাড়াতে থাকে এবং গত ছয় দশকে দেশে ফসল উৎপাদনে প্রতি হেক্টর জমিতে ফসলভেদে ১০০-৭০০ কেজি রাসায়নিক সার (ইউরিয়া+টিএসপি+এমপি), যথেচ্ছা পরিমাণ রাসায়নিক আগাছানাশক ও বালাইনাশক ব্যবহার করা হতো। যার পুরোটাই রাজস্ব খাত সাবসিডিনির্ভর। এ সাবসিডির পরিমাণ অব্যাহতভাবে বাড়ছিল। দেখা গেছে ২০২০ সালে শ্রীলংকার বিদেশী সারের আমদানি (রাষ্ট্রীয় ও বেসরকারি উভয় ক্ষেত্রেই) ২৫৯ মিলিয়নে পৌঁছে এবং মূল্যের ভিত্তিতে দেশের মোট আমদানির ১ দশমিক ৬ শতাংশ। ২০২১ সালে আন্তর্জাতিক বাজারে সারের মূল্যবৃদ্ধির প্রেক্ষাপটে সে মূল্য বিল ৩০০-৪০০ মিলিয়ন ডলারে উন্নীত হওয়ায় সরকার তড়িঘড়ি করে ব্যয়বহুল বৈদেশিক মুদ্রা নিষ্কাশনকারী সার ও কৃষি রাসায়নিক আমদানি নিষিদ্ধ করে দেয়। অজুহাত হিসেবে জৈব কৃষিচর্চা বাস্তবায়ন করাকে দাঁড় করানো হয়।

সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ুন

প্রতিদিন ৩৫০০+ সংবাদ পড়ুন প্রিয়-তে

আরও