ছাত্রদলের ওপর হামলা: নিন্দনীয় ও শাস্তিযোগ্য
মঙ্গলবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে শাসক দল আওয়ামী লীগ-সমর্থিত বাংলাদেশ ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা বিএনপি-সমর্থিত বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের নেতাকর্মীদের ওপর যে ন্যক্কারজনক হামলা চালিয়েছে, তা শুধু নিন্দনীয় নয়; শাস্তিযোগ্য অপরাধও বটে। ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদকের দাবি অনুসারে, মঙ্গলবার তাঁদের নেতাকর্মীরা যখন শান্তিপূর্ণ মিছিল নিয়ে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার হয়ে টিএসসির দিকে যাচ্ছিল, তখন ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা বিভিন্ন দেশীয় অস্ত্র নিয়ে তাদের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে। এতে তাঁদের অন্তত ৮০ জন আহত হয়, যাদের মধ্যে সরকারবিরোধী এ সংগঠনটির একজন কেন্দ্রীয় নেত্রীসহ বেশ কয়েকজনের অবস্থা গুরুতর। ছাত্রলীগের নেতারা যদিও দাবি করেছেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীরাই ছাত্রদল নেতাকর্মীদের 'প্রতিহত' করেছে।
বুধবার সমকালের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ছাত্রদল কর্মীরা বিশ্ববিদ্যালয়ে ঢুকতে পারে- এ আশঙ্কায় ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা সকাল থেকেই স্টাম্প ও লাঠিসোটা হাতে ক্যাম্পাসের বিভিন্ন স্থানে অবস্থান নেয়। তা ছাড়া সরকার-সমর্থক সংগঠনটির বেশ কিছু নেতাকর্মীকে মোটরসাইকেলে ক্যাম্পাসে ওই সময় মহড়া দিতেও দেখা যায়। অর্থাৎ ছাত্রদলের ওপর ছাত্রলীগের ওই হামলা ছিল পরিকল্পিত। উল্লেখ্য, বর্তমান সরকার ২০০৯ সালে ক্ষমতার আসার পর থেকেই ছাত্রলীগের হামলার কারণে ছাত্রদল নেতাকর্মীরা ক্যাম্পাসছাড়া। এমনকি তাদের বহু নেতাকর্মী বিশ্ববিদ্যালয়টির বৈধ ও আবাসিক শিক্ষার্থী হওয়ার পরও ছাত্রলীগের বাধার কারণে হলে থাকতে পারে না। ২০১৯ সালে দীর্ঘদিন পর অনুষ্ঠিত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচনের সময় ক্যাম্পাসে মিছিল-সমাবেশ করার সুযোগ পেলেও নির্বাচনের পর ছাত্রদল নেতাকর্মীদের আবারও বের করে দেয় ছাত্রলীগ। সম্প্রতি ছাত্রদলের নতুন কেন্দ্রীয় কমিটি গঠিত হয়েছে। সম্ভবত সে উপলক্ষেই বাংলাদেশের ছাত্র রাজনীতির প্রাণকেন্দ্র ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে মঙ্গলবার মিছিলের চেষ্টা করে ছাত্রদল। তা করতে গিয়ে তাদের এ নির্মম হামলার শিকার হতে হলো।
পরিহাসের বিষয় হলো, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে সাংগঠনিক কর্মকাণ্ড চালাতে গিয়ে ছাত্রদল নেতাকর্মীরা এমন এক সময় ছাত্রলীগের হামলার শিকার হলো, যখন সরকারের তরফ থেকে বিশেষ করে আগামী নির্বাচন ঘিরে দেশে সব রাজনৈতিক দলের জন্য একটা শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের পরিবেশ নিশ্চিত করার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হচ্ছে। খোদ প্রধানমন্ত্রী সম্প্রতি দলীয় কেন্দ্রীয় কমিটির এক সভায় বলেছেন, আগামী নির্বাচনে বিএনপিকে আনার জন্য প্রয়োজনীয় সবকিছুই করা হবে। এর পরপরই শাসক দলের সাধারণ সম্পাদক বলেছেন, বিএনপিসহ বিরোধী দলগুলো যাতে দেশের সর্বত্র নির্বিঘ্নে তাদের সব ধরনের কর্মসূচি পালন করতে পারে সে ব্যবস্থা করার জন্য প্রশাসনসহ সংশ্নিষ্ট সব মহলকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। স্বীকার করতে হবে, আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওই বক্তব্য দেওয়ার পর ঢাকাসহ দেশের বেশ কিছু এলাকায় বিএনপি এ পর্যন্ত অনেকটা নির্বিঘ্নেই তাদের রাজনৈতিক কর্মসূচি পালন করতে পেরেছে। তা দেখে গত কয়েক দশক ধরে চলমান প্রধান দুই দলের পাল্টাপাল্টি রাজনীতির কারণে ত্যক্ত-বিরক্ত সবার মাঝেই একটা ধারণা গড়ে উঠেছিল যে, অন্তত নির্বাচন সামনে রেখে হলেও রাজনৈতিক দলগুলো দেশের অগ্রগতি ও সমৃদ্ধির জন্য গুরুত্বপূর্ণ শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে এবং এর ইতিবাচক প্রভাব দেশের সর্বত্র এমনকি শিক্ষাঙ্গনেও পড়বে। কিন্তু মঙ্গলবারের ঘটনায় ওই শুভবোধসম্পন্ন মানুষেরা একটা ধাক্কা খেলেন- এ কথা বলাটা নিশ্চয় অত্যুক্তি হবে না।