 
                    
                    পরাধীনতার বিরুদ্ধে সংগ্রামে নজরুল নিষিদ্ধ ও বাজেয়াপ্ত হন
বাঙালির মুক্তি সাধকের হাতে নয়, বিদ্বানের হাতেও নয়, বাঙালির মুক্তি কবির হাতে। বিশ শতকের গোড়ায় যখন বাঙালি স্বদেশমুক্তির আন্দোলনে নামে, স্বপ্ন ছিল বাঙালির স্বাধীনতা। তবে সেই স্বাধীনতার আহ্বান রাজনৈতিক নেতা নয়, এসেছিল কবির কাছ থেকে। তিনি বিদ্রোহী কবি, সাম্যবাদের কবি, গণজাগরণের কবি, রেনেসাঁসের কবি কাজী নজরুল ইসলাম। বাঙালি মুসলমান সমাজে বিশ শতকের গোড়ায় মুক্তির পথ, স্বাধীনতার পথে আগলে ছিল অনেক রকম বাধা। সেখানে জাগরণের চেয়ে পুনর্জাগরণবাদের শক্তি ছিল বেশি। তাই এই সমাজ থেকে আগত কবিকে হতে হয়েছে বজ্রশক্তিসম্পন্ন।
কবিকে করা হয় গ্রেফতার। আদালতের কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হয়। জেল হয়। জেল-জুলুমের প্রতিবাদে অনশন করতে হয়। আর তিনি পরিণত হন কিংবদন্তির নায়কে। তবে পরাধীন যুগের কবির মনমানসিকতা ও সৃষ্টিকর্মে ছিল না পরাধীনতার কোন ছোঁয়া। সৃষ্টির ভুবনে নজরুল ছিলেন স্বাধীন। তার স্বাধীন চিত্তের জাগরণ ছিল চির সমুন্নত।
কাজী নজরুল হলেন সংকট মুক্তির সেই কবি, যার জন্য মুসলমান সমাজ দীর্ঘদিন অপেক্ষা করছিল। এটাতো স্পষ্ট যে, কাজী নজরুল নন যে কোনো কবি। নজরুল পালন করে গেছেন সমস্যা বিজড়িত একটি সমাজের সংকট মুক্তির ঐতিহাসিক দায়। তার কবিতায় যে পৌরুষপূর্ণ বিদ্রোহের কণ্ঠস্বর ধ্বনিত হয়েছে, তা-ও কোনো আকস্মিক বা সঙ্গতিহীন বিচ্ছিন্ন ব্যাপার বলে এই একুশ শতকেও মনে হয় না। যুগসঞ্চিত বিপত্তির নানা রকম চাপ ভেঙে যাঁকে মুক্তির গান গাইতে হয়, তাঁকে তো বিদ্রোহী কবি হতেই হয়। কিন্তু বিদ্রোহী কবি নজরুলের মূল পরিচয় নয়। জাগরণ বা মুক্তির প্রয়োজনে তিনি বিদ্রোহী। আসলে নজরুল ছিলেন জাগরণের কবি। বাঙালি মুসলমানের রেনেসাঁসের কবি। সে সময়ের দুর্বলতর মুসলিম সমাজের জাগরণের কবি হয়ে নজরুল কোথাও স্খলনের চিহ্ন তৈরি করেননি।
 
                    
                 
                    
                 
                    
                -68f7ebaa39de2-6903ee942e8e5.jpg) 
                    
                 
                    
                 
                    
                 
                    
                 
                    
                 
                    
                 
                    
                