নজরুলের রাজনৈতিক সচেতনতা
পরিচয় আর বন্ধুত্বই সব, রাজনৈতিক সচেতনতা বলে কিছু নেই, এটি মানতেন না কাজী নজরুল ইসলাম। একসময় রাজনৈতিক দলের সঙ্গেও যুক্ত হয়ে গিয়েছিলেন এবং সেই সংযুক্তির কারণে বিভিন্ন জায়গায় তিনি ছুটে গেছেন। কিন্তু খুব বেশিদিন তিনি রাজনৈতিক দলের প্রত্যক্ষ কর্মী বা সদস্য হিসেবে সংযুক্ত ছিলেন না। যত দিন স্বাভাবিকভাবে বেঁচে ছিলেন, তত দিন তিনি আমাদের সামনে একজন উন্নত শির রাজনীতিসচেতন ‘যুগপুরুষ’ হিসেবেই বিবেচিত হয়ে এসেছেন।
যৌবনের একেবারে সূচনায় প্রথম বিশ্বযুদ্ধের এক পক্ষ মিত্রবাহিনী, তার সদস্য ব্রিটিশদের সেনাবাহিনীতে নজরুল যে যোগ দিলেন এবং করাচিতে পৌঁছলেন, তার পেছনে কারণ আছে। অনেকে মনে করেন, ক্ষুন্নিবৃত্তি নিবারণ আর নিশ্চিন্ত কিছু দিনযাপনের জন্য অনিকেত নজরুল হাবিলদার নজরুল হয়েছিলেন। আদতে তা নয়। শুধু পেটের ভাত জোগাড় করার জন্য তিনি সেনাবাহিনীতে যোগদান করেননি। এখানেও ছিল তাঁর রাজনৈতিক মনস্কতা। সেই সময়টিই ছিল রাজনীতির। ১৯০১ সালে তরুণ বিপিনচন্দ্র পাল ইংল্যান্ড থেকে ভারতে প্রত্যাবর্তন করেন আর রাজনীতির সঙ্গে জড়িয়ে যান। বিলেতফেরত বিপিন পালের রাজনীতিতে সংযুক্ত হওয়া ওই সময় তরুণদের ব্যাপকভাবে প্রভাবিত করেছিল। ১৯০২ সালে ব্রিটিশবিরোধী ‘অনুশীলন’ দলের প্রতিষ্ঠা হয় আর সেখানে যুবকরা শরীরচর্চার নামে স্বদেশমুক্তির স্বপ্ন দেখতে থাকে। ‘অনুশীলন’ দলের কার্যক্রম এতটাই বিস্তৃতি পেয়েছিল যে তরুণ ছাত্র-ছাত্রীরা এই সংগঠনের ছায়াতলে খুব দ্রুতই সংযুক্ত হয়েছিল। ১৯০৫ সালে হয় বঙ্গভঙ্গ। বঙ্গভঙ্গের আগে বাংলার রাজনীতি খুবই উত্তপ্ত হয়ে ওঠে, বিশেষ করে হিন্দু-মুসলমানের পারস্পরিক সম্পর্ক স্বাভাবিক থাকে না। জন্ম হয় অবিশ্বাসের। পরের বছরই প্রতিষ্ঠা পায় মুসলিম লীগ এবং তারা বঙ্গভঙ্গ যাতে টিকে থাকে, সে জন্য সোচ্চার হয়। অন্যদিকে বঙ্গভঙ্গবিরোধী শক্তি জোটবদ্ধ হতে থাকে আর তাদের আন্দোলন হয়ে ওঠে তীব্রতর।