ভুয়া তথ্যের মিছিলে লাভবান হচ্ছে কারা
সম্প্রতি আন্তর্জাতিক পর্যায়ের খবরে বারবার বাংলাদেশের নাম আসতে দেখা যাচ্ছে। গুম ও বিচারবহির্ভূত হত্যার অভিযোগে র্যাব ও সাত কর্মকর্তার বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা আরোপ এবং মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে মার্কিন প্রতিবেদনে নেতিবাচক মন্তব্যের জের ধরে বাংলাদেশ প্রসঙ্গ আলোচনায় ছিল। এবার মুক্ত গণমাধ্যমের সূচকে বাংলাদেশ ১০ ধাপ পিছিয়ে খবরে এসেছে।
এমনিতেই দেশের রাজনৈতিক চর্চা, গণতান্ত্রিক অধিকার, নির্বাচন পদ্ধতি নিয়ে সমালোচনা আছে। গণতন্ত্রের জন্য গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হলো মানবাধিকার, সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা, কথা বলার অধিকার ও দ্বিমত পোষণের সুযোগ। এর সব কটি সূচকে ধারাবাহিকভাবে বাংলাদেশের পতন হচ্ছে। জীবনের নিরাপত্তাহীনতা, যখন-তখন যাকে খুশি তাকে দিনদুপুরে প্রকাশ্যে পিটিয়ে মেরে ফেলা, বিভিন্ন বক্তব্যের জন্য আটক করা, গুম ও বিনা বিচারে হত্যা জনমনে ভয়ের পরিবেশ সৃষ্টি করেছে। সমাজে প্রকাশ্যে কথা বলার খুব বেশি স্বাধীনতা নেই। রাজনীতির মাঠে গত এক দশকে যেন গণতন্ত্রের পথ হারিয়েছে আমাদের রাষ্ট্র। সরকার আইন প্রণয়ন করে, চাপ দিয়ে জনসমাজকে নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করছে। কিন্তু গত বছরের শেষ দিকে এসে নিষেধাজ্ঞাসহ আন্তর্জাতিক চাপের মুখে পড়েছে সরকার। সবকিছু খানিকটা এলোমেলো মনে হচ্ছে। নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করাতে নানা ঘাটে খাবি খাচ্ছে সরকার। এমনকি সরকার আমাদের জাতীয় বিষয়ে দূতিয়ালির জন্য ভারতের দ্বারস্থ হয়েছে।
এ অবস্থার মধ্যে রিপোর্টার্স উইদাউট বর্ডারস (আরএসএফ) ২০২২ সালের বিশ্ব মুক্ত সংবাদমাধ্যম সূচক প্রকাশ করেছে। এ সূচকে আমরা কখনোই খুব বেশি ভালো অবস্থানে ছিলাম না। এবারও তার ব্যতিক্রম হয়নি। বরং অনুমিতভাবেই সূচকে আমাদের দেশের অবস্থান আরও নিচে নেমে গেছে। গতবার অবস্থান ছিল ১৫২। এবার ১০ ধাপ কমে ১৬২ হয়েছে। দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে আমাদের অবস্থান সবার নিচে। এমনকি যুদ্ধবিধ্বস্ত ও তালেবানশাসিত আফগানিস্তানের চেয়েও আমাদের পরিস্থিতি খারাপ। আরএসএফের মতে, বাংলাদেশের সংবাদমাধ্যমের পরিস্থিতি খুবই বাজে।
রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সামাজিক, আইনবিষয়ক ও নিরাপত্তার পরিস্থিতিকে বিবেচনা করে আরএসএফ মুক্ত সংবাদমাধ্যমের সূচক তৈরি করেছে। বিশ্লেষণ করলে দেখা যাবে, প্রতিটি ক্ষেত্রেই আমাদের সংবাদমাধ্যম বাজে অবস্থায় রয়েছে। প্রথমেই রাজনৈতিক প্রসঙ্গ নিয়ে আলাপ করা যেতে পারে। রাজনৈতিক চাপ, হামলা-মামলার কারণে দেশে সাংবাদিকতা করা অনেকটা আতঙ্কের বিষয়ে পরিণত হয়েছে। পরিস্থিতি এতটাই খারাপ যে সাংবাদিকতা করা অনেকটা হাত-পা বেঁধে পুকুরে ফেলে দিয়ে কুমিরের সঙ্গে লড়াই করার মতো পরিস্থিতি বলে সরকার-সমর্থক প্রবীণ সাংবাদিকেরাই বলছেন। এ মন্তব্য থেকেই দেশে সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতার বিষয়টি আঁচ করা যায়।