বাজারে চোর ঢুকেছে...
সেদিন সময় টেলিভিশনে দেখছিলাম তরমুজ নিয়ে সংবাদ বিস্তার। বাজার থেকে খেত, পুরোটাই। দেখছিলাম ঢাকার ৭০০ টাকার তরমুজে আসলে কৃষক কত পেলেন। আমার পরিচিত অনেকেই অবাক হয়েছেন ক্রেতা আর উৎপাদকের বঞ্চনার চিত্র দেখে। আমার অবশ্য অবাক হওয়ার সুযোগ কম। কারণ পেশার সুবাদে আমাকে মানুষের নানা বঞ্চনার সঙ্গে সব সময় থাকতে হয়। তাই আমি অবাক বন্ধুদের আরেকটু অবাক করে দিই। বলি, ভাইরে, আমাদের বাজার পরিস্থিতি এখানে এসে আটকে গেছে। এখন এটাই নিয়ম। আমি তাদের বোঝানোর চেষ্টা করি, এমনটাই হওয়ার কথা ছিল।
আমি নিজেও তরমুজের খবর নিয়েছি। একজন কৃষক শ হিসাবে তরমুজ বিক্রি করেন। এক শ তরমুজ তিনি সর্বোচ্চ ৫ হাজার টাকায় বিক্রি করতে পারেন। আবার সর্বনিম্ন ২ হাজার ৫০০ টাকা শতেও বিক্রি করেন। সেই তরমুজ ঘাটে ঘাটে চাঁদা দিয়ে, ডাকাতের হামলা এড়িয়ে আসে ঢাকায়। আড়তে সব সাইজের তরমুজ বেচার পর গড়ে প্রতিটির বিক্রি দাম দাঁড়ায় ১০০ টাকায়। এর মধ্যে চাঁদা আছে, পরিবহন খরচ আছে, শ্রমের দাম আছে। সবই দিতে হয় কৃষককে। সব মিলিয়ে কৃষক নিজে প্রতিটি তরমুজের দাম ৫০ থেকে ৭০ টাকার বেশি পান না।
আড়তদারের কাছ থেকে ব্যবসায়ীও গড়ে ১০০ থেকে ১২০ টাকায় বড় তরমুজ কেনেন। শ হিসাবে কিনে তিনি বিক্রি করেন কেজিতে। ৪০ থেকে ৫০ টাকা নেন প্রতি কেজি। এতে নিজের চোখেই দেখা প্রতিটি তরমুজে খুচরা ব্যবসায়ী ১০০ থেকে ৪০০ টাকা লাভ করেন। ব্যবসায়ীদের ভাষায় হয়তো এটা লাভ। কিন্তু আমজনতার কাতার থেকে আমি বলি, প্রকাশ্যে চুরি। অর্থনীতিবিদ কিংবা বাজার বিশ্লেষকেরা আরও সুন্দর ভাষায় হয়তো বলবেন। কিন্তু আমার ওই এক কথা।
ইদানীং খুব বিরক্ত হয়ে পাড়ার এক তরমুজ ব্যবসায়ীকে জিজ্ঞেস করেছিলাম এমন দাম কেন? নির্বিকার চিত্তে তিনি বললেন, ‘বছরে একবার আমাদের বেশি আয় করতে দেবেন না? আপনি বোনাস পান না? তা ছাড়া, আমারে কন, হাসপাতালে কন না ক্যান? স্কুলে কন না ক্যান? সেইখানে তো হিসাব লন না? জিগান না গরিব দ্যাশের হাসপাতালে ঢুকলেই ক্যান খরচ লাখ টাকা ছাড়ায়? স্কুলের বেতন ক্যান ৫ থেকে ৫০ হাজার? তাগো মাস্টার বা ডাক্তারের বেতন কত? খবর নিছেন?’
- ট্যাগ:
- মতামত
- বাজার পরিস্থিতি