ঐক্য ও সংগ্রাম শ্রমিক আন্দোলনের বড় শক্তি
১ মে পৃথিবীর দেশে দেশে শ্রমিকশ্রেণির আন্তর্জাতিকভাবে সংহতি ও ঐক্যবদ্ধ থাকার অঙ্গীকার প্রকাশের দিন হিসেবে পালিত হয়। কেন? মহান মে দিবস পৃথিবীর সব শ্রমজীবী মানুষের এক অমর প্রেরণার উৎস। একসময় শ্রমিকদের কোনো সুনির্দিষ্ট কর্মঘণ্টা ছিল না, ন্যায্য মজুরি ছিল না। ১৮৮৬ সালের ১ মে আমেরিকার শ্রমিকেরা সে সময়ের বৃহত্তম শ্রমিক ধর্মঘটের ডাক দিয়েছিলেন। ৮ ঘণ্টা শ্রম, ৮ ঘণ্টা বিশ্রাম ও ৮ ঘণ্টা বিনোদন—এই দাবিতে আহূত আন্দোলনকে তৎকালীন মার্কিন সরকার এবং মালিকপক্ষ স্তব্ধ করতে চেয়েছিল বলপ্রয়োগের মাধ্যমে। পুলিশ ও মালিকদের পেটোয়া বাহিনী নিরস্ত্র শ্রমিকদের ওপর নৃশংস হামলা চালিয়ে ১১ জন শ্রমিককে হত্যা করে। ১৮৮৯ সালে ফরাসি বিপ্লবের শতবর্ষ উদ্যাপন এবং দ্বিতীয় আন্তর্জাতিক সম্মেলনে শিকাগোর এই ঐতিহাসিক ঘটনাটির স্মরণে ১ মে আন্তর্জাতিক শ্রমিক দিবস হিসেবে ঘোষণা করা হয়। সেই থেকে দিনটি নানা আয়োজনের মধ্য দিয়ে বিশ্বব্যাপী পালিত হয়ে আসছে। বাংলাদেশেও পালন করা হয়, ১ মে সরকারি ছুটির দিন।
বিশ্বের সব সৃষ্টির নির্মাতা শ্রমিক-কর্মচারী-মেহনতি মানুষ। মহান মুক্তিযুদ্ধসহ আমাদের দেশের সব গণতান্ত্রিক সংগ্রাম ও উন্নয়নে শ্রমিক-কর্মচারী-মেহনতি মানুষ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখে আসছে। প্রাতিষ্ঠানিক ও অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতে কর্মরত শ্রমিক-কর্মচারীরা হলেন আমাদের দেশের অর্থনীতির মূল চালিকাশক্তি। তাঁদের হাড়ভাঙা পরিশ্রমে প্রতিনিয়ত বর্ধিত হচ্ছে বৈদেশিক মুদ্রার ভান্ডার। তাঁদের শ্রম ও ঘামের ফসল হিসেবে প্রতিবছর দেশের জিডিপি বাড়ছে, বাজেট বাড়ছে, সম্পদ বাড়ছে, মানুষের গড় আয়ু বাড়ছে, দেশের সম্মান বাড়ছে। কিন্তু শ্রমিক-কর্মচারী-মেহনতি মানুষকে তাঁদের ন্যায়সংগত অধিকার ও সুযোগ-সুবিধা সেভাবে দেওয়া হচ্ছে না। তাঁদের জীবনমানেরও তেমন কোনো উন্নতি ঘটেনি। তাঁরা এখনো পরিবার-পরিজনসহ জীবনধারণের উপযোগী মজুরি ও অবাধ ট্রেড ইউনিয়ন অধিকার থেকে বঞ্চিত। কর্মস্থলে তাঁদের চাকরির নিরাপত্তা ও সামাজিক মর্যাদাও প্রতিষ্ঠিত হয়নি এখনো। তাঁদের যে মজুরি দেওয়া হয় তা দিয়ে তাঁরা ভালোভাবে জীবনযাপন করতে পারেন না কিংবা সন্তানের শিক্ষা ও চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে পারেন না। দেশের শ্রমবাজারে প্রতিনিয়ত পুরুষ শ্রমিকের পাশাপাশি ব্যাপকসংখ্যক নারী শ্রমিকের আগমন ঘটলেও কর্মক্ষেত্রে নারী শ্রমিকদের বিভিন্ন প্রতিকূল পরিস্থিতির সম্মুখীন হতে হয়। মজুরিবৈষম্য, যৌন হয়রানিসহ নানাবিধ নিপীড়নে অনেক নারী শ্রমিক আবার চাকরি ছেড়ে দিতে বাধ্য হচ্ছেন।
সব খাতের সব শ্রমিকের মৌলিক চাহিদা পূরণ করে মর্যাদাপূর্ণ জীবনযাপনের জন্য জাতীয় ন্যূনতম মজুরি নিশ্চিত করা প্রয়োজন। অন্যান্য দেশের মতো আমাদের দেশেও একটা নীতিমালা করা উচিত। আমাদের দেশে আগে মহার্ঘ ভাতা চালু ছিল। কিন্তু এখন আর মহার্ঘ ভাতা দেওয়া হচ্ছে না। জীবনধারণের জন্য নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যসামগ্রীর দাম যেভাবে বাড়ে, তার সঙ্গে সংগতি রেখে প্রতিবছর মহার্ঘ ভাতা চালু করা উচিত।
- ট্যাগ:
- মতামত
- মহান মে দিবস